দুই মাসে বেতন বকেয়া ৬ কোটি টাকা : নেই থাকা-খাওয়াসহ অস্ত্র সংরক্ষণের নিরাপদ ব্যবস্থা
স্টাফ রিপোর্টার: দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার পর দেশের ৪৯১টি উপজেলায় চারজন করে মোট এক হাজার ৯৬৪ জন সশস্ত্র অঙ্গীভূত আনসার মোতায়েন রয়েছে। এই আনসার সদস্যরা চার ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করছেন। দুই মাস ধরে তারা দায়িত্ব পালন করলেও সরকারের পক্ষ থেকে বেতন-ভাতার ব্যবস্থা করা হয়নি। জেলা কমান্ড্যান্ট আনসার ও ভিডিপি নিজস্ব স্থানীয় তহবিল থেকে ঋণের মাধ্যমে তাদের বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এসব সদস্যের মানসম্মত আবাসনের ব্যবস্থা নেই। নেই নিরাপদ অস্ত্র সংরক্ষণের ব্যবস্থাও। রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় হোটেলের খাবার খেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন তারা। আনসার সদস্যদের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না থাকায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে ইউএনওরাও কালক্ষেপণ করছেন। তাদের বেতন বিলে স্বাক্ষর করতে ইউএনও অনীহা প্রকাশ করছেন। ফলে স্বল্প বেতনভোগী আনসারদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি হচ্ছে।
এসব সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে চিঠি দিয়েছে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। ৪ নভেম্বর পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, ৩ সেপ্টেম্বর দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও এবং তার পরিবারের ওপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর অক্টোবর থেকে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা অধিদফতর কর্তৃক দেশের ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে ৪৯১টি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য চারজন করে মোট এক হাজার ৯৬৪ জন সশস্ত্র অঙ্গীভূত আনসার মোতায়েন করা হয়। মোতায়েনকালে তাদের মানসম্মত আবাসন ও স্যানিটেশন, জ্বালানি সুবিধাসহ রান্না করার ব্যবস্থা, অস্ত্রের নিরাপদ সংরক্ষণ ও বেতন-ভাতাদি পরিশোধের ব্যবস্থাসহ সব ধরনের বিষয় সুনিশ্চিত করা হয়। কিন্তু দায়িত্ব পালনকালে তারা বিভিন্ন ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
বেতন প্রসঙ্গে চিঠিতে বলা হয়, ২ মাস পার হলেও মোতায়েন করা আনসারদের বেতন-ভাতা পরিশোধের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। প্রতি জেলা কমান্ড্যান্ট আনসার ও ভিডিপি নিজস্ব স্থানীয় তহবিল থেকে ঋণের মাধ্যমে তাদের বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় তহবিলের সীমাবদ্ধতার কারণে দীর্ঘদিন এ ভাতা দেয়া সম্ভব হবে না। মোতায়েনকৃত আনসারদের গত দুই মাসের বেতন-ভাতা বাবদ ৬ কোটি ২২ লাখ ২২ হাজার ৯৩৪ টাকা বকেয়া পড়েছে।
জনবল বাড়ানোর বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়, সশস্ত্র ডিউটির ক্ষেত্রে প্রতি শিফটে ২ জন করে ২৪ ঘণ্টায় ৩ শিফটে ৬ জন প্রহরায় মোতায়েন থাকে। অস্ত্রাগারে কমপক্ষে একজন করে তিন শিফটে ৩ জন, ছুটি প্রতিস্থাপক ও প্রশাসনিক কাজে ২ জন, কমান্ডার (পিসি/এপিসি) একজনসহ প্রতি উপজেলায় কমপক্ষে ১২ জন সদস্য দরকার। সেক্ষেত্রে জনবল মাত্র ৪ জন হওয়ায় তাদের ডিউটির পরিমাণ অত্যাধিক ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। পাশাপাশি ছুটির ব্যবস্থা না থাকায় তাদের মনের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। তাদের মানসম্মত আবাসন ও অস্ত্র সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় অস্ত্র-গোলাবারুদ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় অনেক স্থানে তারা স্থানীয় হোটেলে খাবার গ্রহণ করছে। ফলে তাদের প্রচুর স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
চিঠিতে চার দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হল- প্রত্যেক ইউএনও’র জন্য বর্তমানে মোতায়েন সশস্ত্র অঙ্গীভূত আনসারের সংখ্যা ৪ জনের পরিবর্তে কমপক্ষে ১০ জন করা, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বেতন পরিশোধ করে সংশোধিত জনবলের জন্য কমপক্ষে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বেতন-ভাতা আনসার ও ভিডিপির অনুকূলে বরাদ্দ ছাড় করা, প্রতি উপজেলায় মোতায়েনকৃত আনসার সদস্যদের আবাসন, জ্বালানি সরবরাহ ও রান্নার কক্ষসহ প্রয়োজনীয় আবাসনের ব্যবস্থা করা এবং মোতায়েনকৃত আনসার সদস্যদের ব্যাপারে ইউএনওদের করণীয় বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা।
আনসার সদর দফতর সূত্র জানিয়েছে, সারা দেশে ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যের সংখ্যা ১৬ হাজার ৪০২ জন। এর মধ্যে সমতল এলাকায় ২৬টি ব্যাটালিয়নে মোতায়েন রয়েছে সাড়ে ৯ হাজার সদস্য। এছাড়া পার্বত্য এলাকায় ১৬টি ব্যাটালিয়নে মোতায়েন রয়েছে ৬ হাজার ৩০৪ সদস্য। র্যাবে কর্মরত রয়েছে ৬৩৪ জন। বাকিরা আনসার সদর দফতরেই সংযুক্ত রয়েছে।
ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলার পর প্রথমে সব উপজেলার ইউএনওদের প্রাথমিক নিরাপত্তা দিতে অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের পাঠানো হয়। কিন্তু ইউএনওদের দাবি ছিলো পুলিশ গানম্যানসহ ব্যাটালিয়ন আনসার। তবে পুলিশ গানম্যান ও ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োগের আগ পর্যন্ত অঙ্গীভূত আনসারদেরকে দিয়ে আপাতত নিরাপত্তা ব্যবস্থা চলছে। এর আগে ২০১৮ সালে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিরাপত্তায় ব্যক্তিগত ও বাসস্থানের জন্য পৃথক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করার অনুশাসন দিয়েছিলেন।