ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো একেবারেই ভঙ্গুর
জীবননগর ব্যুরো: জীবননগর উপজেলার উথলী বাজারে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক শাখায় ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশঙ্খলাবাহিনী। তবে জীবননগর থানা পুলিশ সন্দেহভাজন ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য রোববার মধ্যরাতে আটক করে। আটককৃতরা হলো- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আকুন্দবাড়িয়া গ্রামের রহমানের ছেলে জনি (২৫), দেলবারের ছেলে কালু (২৮) এবং হাসমত আলীর ছেলে হৃদয় (২৮)। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল সোমবার বিকেলে আটককৃতদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেফতার করতে এবং ব্যাংক থেকে লুট হওয়া টাকা উদ্ধার করতে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, ডিএসবি, ডিবি, সিআইডিসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা টাকা উদ্ধারে মাঠে কাজ করছেন। এদিকে উথলী সোনালী ব্যাংক শাখায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারেই ভঙ্গুর ছিলো। এ কারণে ডাকাত দল খুব অল্প সময়ের ভেতর তারা তাদের মিশন সম্পন্ন করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছে। ওই ব্যাংকের গ্রাহকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই অভিযোগ করে বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ উথলী বাজার শাখায় কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। এছাড়া ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কোনো অস্ত্রধারী নিরাপত্তা প্রহরী থাকে না। যে ২ জন নিরাপত্তা প্রহরী থাকে তাদের হাতে একটি লাঠি পর্যন্তও থাকে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উথলী বাজারের এক দোকানদার বলেন, ব্যাংক চলাকালীন সময়ের অধিকাংশ সময় নিরাপত্তা প্রহরীরা চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়ে থাকেন। ব্যাংকে নিরাপত্তার চরম ঘাটতি আছে। ডাকাতি ঘটনার খবর পেয়ে রোববার রাত ৮টার দিকে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ক্রাইম) মো. নাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সংবাদ কর্মীদের কাছে তিনিও ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ব্যাংক চালানোর জন্য এ ভবন মোটেও উপযুক্ত না। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতি আছে। ব্যাংকের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে একটা সিসি ক্যামেরাও নেই বর্তমান যুগে এটা ভাবা যায় না। তবে গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা পুলিশের জেলা বিশেষ শাখার পক্ষ থেকে উথলী সোনালী ব্যাংক শাখায় দ্রুত সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য বলা হয়েছে।
অপরদিকে সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনার পর উথলী বাজার এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ডাকাতি আতঙ্ক বিরাজ করছে। উথলী বাজারপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা আব্দুল মান্নান পিল্টু বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে দিনের বেলায় ডাকাতি সংঘটিত হওয়ার পর আমরা সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি। উথলী বাজারের এক দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনার পর আমার পরিবারের সবাই ডাকাতি আতঙ্কে ভুগছি।
অপরদিকে গতকাল সোমবারও সকাল থেকে ডাকাতি ঘটনার ক্লু উদঘাটনের জন্য শাদা পোশাকে র্যাব, সিআইডি, ডিজিএফআই, পুলিশ ও ডিবি পুলিশের কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে দেখা গেছে। জীবননগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার পরপরই পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ডাকাতসহ ব্যাংক থেকে লুট হওয়া টাকা উদ্ধারে সাড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত: জীবননগর উপজেলার উথলী বাজারে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত উথলী সোনালী ব্যাংক শাখায় গত রোববার বেলা সোয়া ১টার সময় ফিল্মিস্টাইলে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদল এ সময় অস্ত্রের মুখে ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরীসহ সবাইকে জিম্মি করে নগদ ৮ লাখ ৮২ হাজার ৯শ টাকা লুট করে নির্বিঘেœ পালিয়ে যায়। ডাকাতির ঘটনার পর খবর পেয়ে খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) ক্রাইম মো. নাহিদুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম, জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজি মো. হাফিজুর রহমান, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম লিংকন, চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) আবু রাসেল, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) উপপরিচালক জিএম জামিল সিদ্দিক, সোনালী ব্যাংকের ফরিদপুর জিএম অফিসের জেনারেল ম্যানেজার (ইনচার্জ) খোকন চন্দ্র বিশ্বাস, সোনালী ব্যাংকের চুয়াডাঙ্গার প্রিন্সিপাল অফিসের ব্যবস্থাপক খন্দকার আবুল কালাম আজাদ, সহকারী ব্যবস্থাপক আনিসুর রহমান, জীবননগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামসহ র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), ডিজিএফআই, ডিএসবি ও সিআইডির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ডাকাতির ঘটনায় রোববার রাত ১০টার সময় উথলী সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আবু বক্কর সিদ্দিক বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৩ জনের নামে জীবননগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ