প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষ আবাসন গড়ে তোলে। জনসংখ্যা বাড়ছে বলেই উজাড় হচ্ছে আবাদি জমি, হ্রাস পাচ্ছে বনবাদাড়। ক্ষতির পরিমাণ কমানোর জন্য সমাজসৃষ্ট রাষ্ট্র জারি করে বিধি নিষেধ। যখনই বিধি নিষেধকে অবজ্ঞা করা হয় তখনই বাড়ে খেসারত। উচ্চ ক্ষমতার বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনের পাশে অট্টালিকা নির্মাণ করতে গিয়ে একের পর এক ক্ষতি তারই অন্যতম উদাহরণ। প্রতিকার? জারিকৃত বিধি নিষেধ মানতে বাধ্য করার মতো অনমনীয় প্রশাসনের পদক্ষেপ অবশ্যই উৎকৃষ্ট উপায়। প্রয়োজন সচেতনতাও।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সিনেমাহলপাড়ার চক্ষু হাসপাতালের নিকট একটি বাড়ি রয়েছে উচ্চ ক্ষমতার বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনের কোল ঘেঁষে। ওই বাড়ির তিন তলায় কয়েক দফা বিদ্যুতায়িত হয়েছে কয়েকজন। এর মধ্যে এক শিশু ঝলসে গেছে বিদ্যুতে। সে প্রায় বছর দেড়েক ধরে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনার পর গত রোববার সকালে চুয়াডাঙ্গা ফার্মপাড়ার একটি নির্মাণাধীন দোতলার ছাদে ঘটেছে বিপত্তি। ছাদ ঢালাইয়ের জন্য রড বাঁধতে গিয়ে রড রাজমিস্ত্রি বিদ্যুতায়িত হয়ে ঝলসে গেছেন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নেয়া হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। একের পর এক ঘটনা ঘটলেও শক্তহাতে বাস্তব ব্যবস্থা নেয়ার তেমন নজির মেলে না। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছে, এটা কি সভ্য সমাজ? যে বাড়িগুলো ঝুঁকিপূর্ণভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলোর মালিকদের মুখ থেকে প্রায় শোনা যায়, আমরা বিদ্যুতের ওই সঞ্চালন লাইন নিরাপদ দূরুত্বে সরাতে বলেছি। অন্যথায় দিতে বলেছি নিরাপদ তার বা ক্যাবল। এ কথা বলার সাথে সাথে যে প্রশ্নটি সামনে আসে তা হলো- অট্টালিকা নির্মাণের পর উচ্চক্ষমতার বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন, নাকি বিদ্যুত লাইন না দেখার ভান করে বিধি নিষেধকে অবজ্ঞা করে ভবন নির্মাণ? নির্মাতা না হয় উচ্চ ক্ষমতার বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন দেখলেন না, পৌরসভার কর্তব্যরত কর্তা কেন দেখলেন না? পৌর এলাকায় ঘর বাড়ি তো বটেই যেকোনো স্থাপনা নির্মাণেই তো নকশা প্রণয়ন করে অনুমোদন নিতে হয়। অবশ্যই অনুমোদনদাতাকেও আইনের আওতায় নেয়া উচিত। তাছাড়া যেকোনো স্থাপনা নির্মাণকাজে নিয়োজিতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়োগকর্তার দায়িত্ব। ফার্মপাড়ার নির্মাণাধীন বাড়ির কর্তার তাতে যে বড্ড ঘাটতি তা স্পষ্ট। ফলে দেশের প্রচলিত শ্রম আইনে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ আদায়ে প্রশাসনের সোচ্চার হওয়া দরকার। ঘটনার পর ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। ওটা তো দয়া নয়। দায়িত্বেরই অংশ। ক্ষতিপূরণ পাওয়া শ্রমিক ও তার পরিবারের আইনগত অধিকার। নিয়োগ কর্তা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য।
দরকারেই মানুষ অট্টালিকা গড়ে, ক্ষতি ঠেকাতে সরকার আইন করে। আইন বা বিধি নিষেধ থেকেও কোনো লাভ হয় না, যখন তা প্রয়োগে গড়িমসি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে উচ্চ ক্ষমতার বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনে একের পর এক ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলা মানেই দায় এড়ানো। অজুহাতে অন্যায় আড়াল করার চেয়ে ন্যায় নিয়মের সমাজ গড়ার লক্ষ্যে নিয়োজিতদের যতো তাড়াতাড়ি কুম্ভঘুম ভাঙবে ততোই মঙ্গল। এ ঘুম ভাঙিয়ে কর্তাদের কর্তব্যপরায়ণ করতে কতোটা উচ্চস্বরে চিৎকার দরকার তা সমাজকেই ভাবতে হবে।