স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা মুক্তিপাড়ার ভৈরব কোভিড-১৯ রোগী ছিলেন। মৃত্যুর পর তার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে পজিটিভ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে জেলায় করোনার মৃত্যুর সংখ্যা ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা যেনো চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়ছে। মঙ্গলবারও চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও স্বাস্থ্য বিভাগ অবশ্য একজনের করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তিনি বিএনপি নেতা ছিলেন। অপরদিকে, মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা জেলার আরও ২২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। জীবননগরে একদিনেই উথলী ইউপি চেয়ারম্যানসহ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ জন। এ নিয়ে মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮শ ৯০ জন। এর মধ্যে ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৪৪ জন।
জানা গেছে, করোনা উপসর্গ নিয়ে গতপরশু দুজনের পর গতকাল মঙ্গলবার আরও চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সিনেমাহলপাড়ার হাজি আব্দুল মান্নান চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের হলুদ জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে মারা যান। আলমডাঙ্গা মুন্সিগঞ্জের একজন কাপড় ব্যবসায়ীকে ঢাকায় নেয়ার পথে সোমবার রাতে মৃত্যু হয়। এছাড়া বাগানপাড়ার একজনের মৃত্যু হৃদরোগে হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। অপরদিকে, ভালাইপুরের বিশিষ্ট ইটভাটা ব্যবসায়ী চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনিও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে। গত রোববার চুয়াডাঙ্গা মুক্তিপাড়ার ভৈরব নামের একজন মারা যান। ৫৬ বছরের ভৈরবও করোনা উপসর্গে তথা সর্দি কাশি জ্বরে ভুগছিলেন। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করা হয়। মঙ্গলবার তিনিসহ ২৯ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। যার মধ্যে ৬ জনের পুনঃপরীক্ষার রিপোর্ট। নতুন যে ২২ জন শনাক্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে জীবননগর উপজেলা শহরের জনতা ব্যাংকেরই ৪ জন। জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন, জীবননগর হাসপাতালপাড়ার ৪ জন, বাজারপাড়ার একজন, জীবননগর ঠিকানা দেয়া একজন, জীবননগর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের একজন, সেনেরহুদার একজন ও বালিহুদার ২জন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ইসলামপাড়ার একজন, মাদরাসাপাড়ার একজন, ডিঙ্গেদহের দুজন। আলমডাঙ্গা উপজেলার মুচনাইনগরের একজন, আলমডাঙ্গা বোয়ালিয়ায় একজন। আর দামুড়হুদার একজন।
এছাড়া চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার জানিয়েছেন, জেলা শহরের মুক্তিপাড়ার ভৈরব করোনা উপসর্গ নিয়ে গত রোববার মারা যান। তার রিপোর্ট মঙ্গলবার পাওয়া গেছে। তাতে দেখা গেছে তিনি করোনা আক্রান্ত তথা কোভিড-১৯ রোগী ছিলেন। মঙ্গলবার ভোর ৪টায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের হলুদ জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চুয়াডাঙ্গা সিনেমাহলপাড়ার আব্দুল মান্নান। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামিম কবির জানান, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সিনেমাহল পাড়ার মৃত ওহাব মিয়ার ছেলে আব্দুল মান্নান (৬০) বেশ কয়েকদিন ধরে সর্দি কাশি ও জ্বরে ভুগছিলেন। সোমবার রাত ১০টার দিকে শ্বাসকষ্ট বাড়লে পরিবারের সদস্যরা তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকায় তাকে হাসপাতালের করোনা ওয়াডের হলুদ জোনে রাখা হয়। মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ডা. শামিম কবির আরও জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া আব্দুল মান্নানের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। আব্দুল মান্নান ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি নেতা। তার মৃত্যুতে চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবদলের পক্ষে সভাপতি শরিফ উর জামান সিজার ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশিদ ঝন্টু শোক জানিয়েছেন। দফতর সম্পাদক মামুন উর রশিদ টনিক স্বাক্ষরিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে বিএনপি নেতা হাজি আব্দুল মান্নান জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফিজ উদ্দীন হাবলুর পিতা। তার মৃত্যুতে জেলা যুবদলের পক্ষে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমাবেদনা জানানো হয়েছে।
অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার গড়চাপড়ার মৃত রবিউল ইসলামের ছেলে কাপড় ব্যবসায়ী সাদরে আলম বেশ কিছুদিন ধরে সর্দি কাশি জ্বরে ভুগছিলেন। তার শ্বাসকষ্ট বাড়লে নেয়া হয় ঢাকার পথে। স্থানীয়দের অনেকেই বলেছেন, বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা চলছিলো। ঢাকায় নেয়ার পথে সোমবার রাতে মারা গেলে মৃতদেহ নেয়া হয় নিজ গ্রামে। তিনি মুন্সিগঞ্জের কাপড় ব্যবসায়ী ছিলেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মঙ্গলবার বিকেলে তার দাফন করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিয়াউদ্দিন হাদী। এছাড়া গতকাল চুয়াডাঙ্গা বাগানপাড়ার একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাকেও গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতাল থেকে বলা হয়, তিনি সম্ভবত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
অপরদিকে চুয়াডাঙ্গার ঝোড়াঘাটা গ্রামের মৃত. আমির হোসেন বিশ্বাসের ছেলে ভালাইপুর মোড়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, ইটভাটা ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদৎ হোসেন বিশ্বাস গত রোববার বাড়ীতে স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সদর হাসপাতালের চিকিৎসকগণ প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও রোগীর অবস্থা অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাকা মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে ইন্তেকাল করেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চুয়াডাঙ্গা তাকওয়া ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ঝোড়াঘাটা কবরস্থানে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগসূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ছিলেন ৪৬ জন। হোম আইসোলেশনে ছিলেন ৩শ ৮৩ জন। মঙ্গলবার আরও ৭ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন ৪শ ৪৪ জন।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই না মেনে করোনাভাইরাসকে চরমভাবে অবজ্ঞা এবং মুখে মাস্ক না লাগিয়ে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করায় এর মূল কারণ বলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা মনে করছেন। এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার একদিনেই জীবননগর উপজেলায় ১৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে উথলী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও হাসপাতালের একজন নৈশপ্রহরী রয়েছেন। এ নিয়ে জীবননগর উপজেলায় করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৯৫ জনে।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব দেখা দেয়ার পর গতকাল পর্যন্ত জীবননগর উপজেলা হতে ৫৪৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৫২৫ জনের পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। ২০ জনের রিপোর্ট এখনো আসেনি। নতুন ৩১ জনের নমুনার মধ্যে গতকাল প্রাপ্ত রিপোর্টের মধ্যে উথলী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও হাসপাতালের নতুন করে একজন নৈশপ্রহরীসহ ১৫ জনের করোনাভাইরাস পজেটিভ এসেছে। এ নিয়ে জীবননগর উপজেলায় কোভিড ১৯ রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৯৫ জনে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪০ জন। নেগেটিভ এসেছে ৪৩২ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতালেরই ৮ জন স্টাফ রয়েছেন। তারা সকলেই আইসোলেশনে রয়েছেন। এর ফলে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে বসেছে। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে আবারো জীবননগরবাসীকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জুলিয়েট পারউইন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মুনিম লিংকন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জীবননগরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রয়োজনে বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ