স্টাফ রিপোর্টার: করোনা উপসর্গ থাকা চুয়াডাঙ্গার নতুন ৬০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে প্রেরণ করা হয়েছে। পূর্বে প্রেরণকৃত ১০৫ জনের নমুনা পরীক্ষার কোনো রিপোর্ট গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে আসেনি। নতুন ৬০ জনের নমুনা দিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে বাকি ১৬৫ জনের। এছাড়াও মেহেরপুরে গতকাল আসা ৬টি রিপোর্টের সবগুলোই নেগেটিভ। অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মালোপাড়ার একজন এবং দামুড়হুদা পুড়োপাড়ার একজনের ঢাকায় মৃত্যু হয়েছে। তারা দুজনই কোভিড-১৯ পজেটিভ ছিলেন। তাদের মধ্যে মালোপাড়ার আরা হালদারকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলা মহাশ্মশানে সমাধী করা হয়েছে। রাত ১০টার পর গ্রামের কবরস্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুড়োপাড়ার ওই নারীর দাফন সম্পন্ন হয়।
সিভিল সার্জন অফিসসূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার নতুন কোনো রিপোর্ট না আসায় শনাক্তের সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৩৯ জন। তবে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য নতুন নমুনা প্রেরণ করা হয়েছে ৬০টি। নতুন সুস্থ হয়েছেন দুজন রোগী। এ পর্যন্ত জেলায় সুস্থ হয়েছেন ১৪৭ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৯ জন। বাড়িতে চিকিৎসাধীন তথা হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ৬৮ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ জন। উপসর্গ নিয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হলেও তাদের করোনা নেগেটিভ হয়েছে।
অপরদিকে ঢাকায় মারা যাওয়া দুজনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মালোপাড়ার একজন পুরুষ। তিনি কিডনি রোগে ঢাকায় মাসখানেক ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত শুক্রবার তার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ হয়। পরে তিনি মারা যান। অপরজন নারী। তিনি দামুড়হুদা উপজেলার পুড়োপাড়া গ্রামের। ঢাকাতেই আক্রান্ত হয়ে ঢাকাতেই মারা গেছেন বলে স্থানীয় স্বাস্থ্যবিভাগসূত্র জানিয়েছে। ঢাকায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া আরা হালদার (৫২) চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মালোপাড়ার জয়ন্ত হালদারের ছেলে। দামুড়হুদা পুড়োপড়ার ৬৫ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধা মৃত ইদ্রিস আলী মালিথার স্ত্রী।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামিম কবির জানান, আরা হালদার কিডনিজনিত রোগে ভুগছিলেন। তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য প্রায় ১ মাস আগে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কয়েক দিন আগে তার করোনা পজেটিভ হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। গতকাল শনিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে পরিবারের লোকজন লাশ চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে আসে। রাতে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলাপাড়ার শ্মশান ঘাটে নেয়া হয় তার লাশ। লাশ শ্মশান ঘাটে সমাধি করা হয়। স্বাস্থ্য বিধি মেনে সমাধি কার্যক্রম সম্পর্ণ করা হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ বলেন, রাতেই মরদেহ শ্মশানে সমাধি করা হয়েছে। তিনি ঢাকায় মারা যান।
দামুড়হুদা পুড়োপড়ার ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা করোনা উপসর্গ নিয়ে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল শনিবার সকাল ৬টার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। রাত ১০টার দিকে নিহতের লাশ ঢাকা থেকে পুড়োপাড়ায় পৌছানোর পরপরই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটি দল পুলিশের উপস্থিতিতে মরহুমার জানাজার নামাজ শেষে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। তিনি ঢাকাস্থ ছেলের বাসায় অবস্থানকালিন দিন পনের আগে আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৩ সন্তানের জননী নিহত বৃদ্ধা পুড়োপাড়া গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলী মালিথার স্ত্রী। বড় ছেলে আব্দুল হান্নান পেশায় একজন চিকিৎসক। ছোট ছেলে বিমান বাহিনীতে কর্মরত। মৃত্যুকালে ২ ছেলে, ১ মেয়ে নাতি, নাতকুড়ীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
দর্শনা পৌর এলাকার বেশ কিছু এলাকা রেডজোন ঘোষণা করে যেমন লকডাউন করে রাখা হয়েছে, তেমনই জীবননগর উপজেলার কিছু এলাকাও লকডাউন। এছাড়া আলমডাঙ্গার হাড়কান্দি গ্রামটিও লকডাউনে। রেডজোন এলাকায় সংক্রমণ রোধে প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য সংশ্লিষ্ট এলাকার অনেকেরই অভিযোগ লকডাউন অনেকটাই ঢিলেঢালা। তাছাড়া দমুড়হুদাসহ যেসব এলাকায় হোম আইসলেশনে রয়েছেন করোনা আক্রান্ত রোগী সেই সব এলাকাতেও অনেকে বিভিন্ন অভিযোগ তুলছেন। তবে আক্রান্তদের সাথে যাতে কোনোভাবে অমানবিক আচরণ না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখছে প্রশাসন। বলা হচ্ছে, আক্রান্তদের যেমন বলা হয়েছে, রোগটি ভয়ানক ছোঁয়াছে হওয়ায় যাতে তা না ছড়ায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। যারা এ বিষয়ে সচেতন হবেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত: চুয়াডাঙ্গার প্রায় ১শ’ নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যাদের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি তাদের অনেকেরই পুনরায় নমুনা নিয়ে পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তিতে পরীক্ষার রিপোর্ট এলেও তাদের পূর্বের পরীক্ষার রিপোর্ট আসেনি। তা আর আসবে বলেও বিশ্বাস নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার এরকমই ধারণা।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পরীক্ষার আরও ৬টি রিপোর্ট এসেছে যার সবগুলোই নেগেটিভ। গতকাল শনিবার বিকেলের মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিসে এ রিপোর্ট আসে। এ সকল রিপোর্ট কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেয়া হয়। মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডাক্তার নাসির উদ্দিন জানান, নতুন করে যে সকল নমুনা পাঠানো হয়েছিলো তার মধ্যে ৬ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের কোন নমুনা পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে মেহেরপুর জেলায় ১ হাজার ৯১৮ জনের মধ্যে ৯২টি পজেটিভ এবং ৩৩ জন সুস্থ হয়েছেন। মৃত্যুবরণ করেছে ৫ জন।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ