স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা উপসর্গ নিয়ে আলমডাঙ্গার যুগিরহুদা গ্রামের শরিফুল নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটের হলুদ জোনে নেয়ার সময় ওই যুবকের মৃত্যু হয়। করোনা উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য গতকালই তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর আলমসাধু যোগে ওই যুবকের মরদেহ নেয়া হয় নিজ গ্রাম আলমডাঙ্গার যুগিরহুদা গ্রামে। খবর পেয়ে উৎসুক জনতা ভিড় জমায় তার বাড়িতে। বাড়ির উঠোনে চৌকির ওপর রাখা মরদেহ জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। সাথে রয়েছেন এলাকাবাসীও। সেখানে স্বজনরা লাশের শরীর স্পর্শ করে কান্নাকাটি করতে থাকে স্বাভাবিকভাবে। উৎসুক গ্রামবাসী লাশ দেখতে ভিড় জমায় ওই বাড়িতে। লাশের কাছে থাকা কাউকে স্বাস্থ্য বিধি মানতে দেখা যায়নি। রাতেই যুগিরহুদা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া লাশ দাফন এবং বহন করার যে প্রক্রিয়া রয়েছে তার কোনো কিছুই অনুসরণ করা হয়নি। লাশ ব্যাগে করে অ্যাম্বেুলেন্স যোগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাড়িতে পৌছে দেয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, নমুনা নেয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না মেনে স্বজনরা জোরপূর্বক মরদেহ আলমসাধু করে নিজ গ্রামে নিয়ে যায়। করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া যুবকের বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক বলেছেন, করোনা উপসর্গ নিয়ে যুবকের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে করোনা প্রটোকল দিয়ে জানাজা করার জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে, উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া যুবকের লাশ বহন ও দাফনে মানা হয়নি কোনো নির্দেশনা। অবাক হলেও সত্য যে স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের উদাসিনতার কারণে লাশ নিয়ে এমন নাটকীয় ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে বলে সচেতন মহল মনে করেন। মারা যাওয়া যুবকের রিপোর্ট যদি করোনা পজেটিভ আসে তাহলে গ্রামবাসীর মধ্যে করোনা আতঙ্ক বিরাজ করবে। বাড়বে আক্রান্তের সংখ্যা। এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও তখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে করোনা ভাইরাস। অপরদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গার নতুন কোন নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসেনি। ফলে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা ২০৩ জনেই রয়েছে। গতকাল নতুন করে ৩৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামিম কবির জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে আলমডাঙ্গার যুগিরহুদা গ্রামের কুরবান আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম (২১) স্বজনদের সাথে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসে। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক মাহাবুবুর রহমানের কাছে রোগীর স্বজনরা বলে শ্বাসকষ্ট, পেট ব্যথা ও বমি হচ্ছে। তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সার্জারি ওয়ার্ডের বারান্দায় নেয়ার পর তার অবস্থার অবনতি হলে আইসোলেশন ওয়ার্ডের হলুদ জোনে নেয়ার প্রস্তুতি চলে। হলুদ জোনে নেয়ার সময় সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। সেখান থেকে মারা যাওয়ার পর তার করোনা পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনা নেয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না মেনে স্বজনরা জোরপূর্বক মরদেহ আলমসাধুতে করে নিজ গ্রামে নিয়ে যায়।
সদর হাসপাতালের অবাসিক মেডিকেল অফিসার আরও জানান, পুলিশের উপস্থিতিতে শরিফুলের স্বজনরা লাশ নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদেরকে বলা হয় সরকারি নিয়ম মেনে লাশ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে ও দাফন করা হবে। লাশ জোর করে নিয়ে গেলে আমাদের কিছু করার নেই। ডাক্তার কাগজপত্র রেডি করছিলো। সে সময় তারা লাশ আলমসাধু যোগে নিয়ে যায়। করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া যুবকের বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পুলিশকে অবহিত করেছি বলেও জানান তিনি।
আলমডাঙ্গা থানার ওসি আলমগীর কবির বলেন, নিয়ম মেনে লাশ দাফন করা হয়েছে। লাশের কাছে কেউ কান্নাকাটি করেনি। সে সময় পুলিশকে ওই ভাবে বলা হয়েছে। মারা যাওয়া রোগীর শুধু স্যাম্পল নিয়েছে, করোনা নিয়ে মারা গেছে এমন কিছু নয়। শুনা মাত্র ব্যবস্থা নিয়েছি। স্বাস্থ্য বিধি মেনে লাশ দাফন করা হয়েছে। আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে এ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি লাইন কেটে দেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে বিষয়টি আমি অবগত আছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে আমি বলে দিয়েছি করোনা প্রটোকল দিয়ে জানাজা করতে। লাশ নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ