নাজনীন হাসান চুমকী দেশের অন্যতম গুণি অভিনয় শিল্পী। নিজের গুণেই চুয়াডাঙ্গার মতো একটি ছোট্ট জেলা থেকে রাজধানীর অভিনয়জগতে গড়েছেন শক্ত ও সম্মানজনক অবস্থান। অভিনয়ে মেধা ও রুচির পরিচয়ে তিনি অনন্য দৃষ্টান্তও বটে। যে নাজনীন হাসান চুমকির অভিনয় নিয়ে চুয়াডাঙ্গার শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গনের সকলে গর্বিত, সেই চুমকী এতোদিন পর সকলকে চমকে দিয়ে বলেছেন, অভিনয়ে আসা ছিলো মস্তবড় ভুল। তিনি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন রকমের রাখঢাক ছাড়াই বলেছেন, ‘অভিনয়ে আসা মস্ত ভুল হয়েছে’ ।
কি সেই ভুল? চাকরি ছেড়ে অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিয়ে বড় ভুলেই হয়েছে। চুমকি নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, চাকরি বাকরি ছেড়ে যেদিন “অভিনয়” কে পেশা হিসেবে নিলাম সেদিন জীবনের মস্ত বড় ভুলটা করলাম। ভুলের কারণ হিসেবে চুমকী উল্লেখ করলেন- সেই থেকে শুনতে হলো,কি ব্যাপার ওজন গেইন করছো কেন? (তখনও আমাকে মোটা লাগতো,বুঝেন অবস্থা), একটু স্মার্ট হও বুঝলে (কারণ আমি সবসময়ই ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাক পরি এবং কাজ ছাড়া মেকাপ করি না),আহা! তোমার সাথে প্রাণ খুলে আড্ডা দেয়া যায় না (কোনও ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বুঝতাম না,এই বিষয়ে চরম অশিক্ষিত আমি),দাওয়াত দাও না আবার আড্ডাতেও আসো না (পরিবার এবং প্রফেশন আজও একটু আলাদা রাখার চেষ্টা করি), একটা সার্কেল মেইনটেইন করা উচিত তোমার বুঝলে (লে হালুয়া শিল্পীরও যে সার্কেল থাকে আমার মোটা মাথা তখনও বুঝতো না,এখনও বোঝে না),তোমাকে নিলে নাটক বিক্রি হয় না (অথচ আমার লেখা,আমার ডিরেকশনের কাজ,শিল্পী তালিকা দেখে চ্যানেল আই আমার শেষ কাজটাতেও আমাকেই অভিনয় করতে বলেছিল),এত টাকা পারিশ্রমিক চুমকী আপা! কম নেয়া যায় না? (অনেকে তো কাজ করিয়ে টাকাও দেয় নাই)।
এইসব তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যেও চুমকি টিকে আছেন। কারণ সম্পর্কে বলেন,অভিনয় আমার প্রফেশন.. সুতরাং একশ ভাগ সততা দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি আমি। সবসময়ই কাজের আগে স্ক্রিপ্ট পড়ে পরিচালক এবং নাট্যকারের সাথে কথা বলি। আজ পর্যন্ত যত পরিচালকের সাথে কাজ করেছি,কেউ বলতে পারবে না সময় নিয়ে ঝামেলা করেছি। পাতার পর পাতার সংলাপ ঠিক বলি, তাই অনেক টেক নিতে হয়না কখনো। কষ্টকর অভিনয়ও মনোযোগ দিয়ে করি। সম্মান দিই ইউনিট-এর ছোট থেকে বড় প্রত্যেক সদস্যকে।
পর্দায় নিজের উপস্থিতি কম সম্পর্কে চুমকি বলেন,এতটা সময় গেছে,আমার বয়স বেড়েছে,তবু আগের চিন্তার মানুষগুলোর চিন্তাধারার পরিবর্তন আসেনি। অথচ আমার মানসিক দৃঢ়তা বেড়েছে। আমি সম্মান করি ছোট বড় নির্বিশেষে;কিন্তু অনেকেই সম্মান করতে জানে না। তাই আমিও সবার সাথে কাজ করে অসম্মানিত হতে চাই না। লম্বা লম্বা লেকচার দিলেই কাজের জায়গা সম্মানিত হয় না। আগে সম্মানজনক পরিবেশ গড়ে তুলুন। একে অপরের পিছনে অহেতুক বদনাম না করার অভ্যাস গড়ুন। নিজেরা আগে ঠিক হই,যেখানে যাকে প্রয়োজন খাতিরের মানুষ বাদ দিয়ে সঠিক মানুষকে কাস্টিং করুন। যোগ্য শিল্পীকে যোগ্য সম্মানী দেয়া চেষ্টা করুন। তারপর লম্বা লম্বা লেকচার দিন। প্রয়োজনকে বাদ অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেই কী শিল্প বাঁচবে।
শিল্পকে অনেক আগেই হত্যা করা হয়েছে,যোগ্য শিল্পী,পরিচালক,নাট্যকারদেরকে অসম্মান এবং হেয় করে। আগের ক’জন গুণী শিল্পী,পরিচালক,নাট্যকার,চিত্রগ্রাহক এবং নাটকের অন্যান্য কলাকুশলীকে চেনেন এখানকার মিডিয়া পার্সনরা? আপনারা তাদেরকে মনে রাখার জন্যে কী করছেন! কে আছেন আসেন সেসব নিয়ে কথা বলি। যে শিল্পের মূল ভুলে যাচ্ছে সেই শিল্পের মানুষরা,সেই শিল্পের বাঁচা আর মরার মধ্যে তফাৎ দেখি না!
উল্লেখ্য, চুমকী চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের রেলপাড়ার ব্যাংককার দম্পতির একমাত্র মেয়ে। যার অভিনয়ে হাতেখড়ি চুয়াডাঙ্গারই ঐতিহ্যবাহী সংগঠন, অরিন্দম’র মঞ্চে।