চুয়াডাঙ্গায় নতুন শনাক্ত না হলেও মেহেরপুরে উপসর্গ নিয়ে ব্যবসায়ীর মৃত্যু : কুষ্টিয়ায় এ সংখ্যা দাঁড়ালো ৪
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন কোন রোগী শনাক্ত হয়নি। গতকাল কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে ১৭টি নমুনার ফলাফল পাওয়া যায়। তার মধ্যে ৬ জনের পুনঃপরীক্ষায় করোনা পজিটিভ এসেছে। এছাড়া গতকাল রোববার পরীক্ষার জন্য নতুন আরও ২৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। মেহেরপুরের গাংনীতে উপসর্গ নিয়ে আপেল হোসেন নামের এক ভূষিমাল ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি সাহারবাটি গ্রামের চারচারা পাড়ার আব্দুল মতিনের ছেলে। মেহেরপুরর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিট থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে গতকাল রোববার সকালে তার মৃত্যু হয়। এদিকে, মেহেরপুরে গতকাল রোববার ২২ জনের নমুনার ফলাফলে একজনের করোনা পজিটিভ এসছে। আক্রান্ত ওই ব্যক্তি সম্প্রতি পাবনা থেকে ফিরেছেন। কুষ্টিয়ায় নতুন করে আরও ৩৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে চারজন ব্যাংক কর্মকর্তা, দু’জন পুলিশ ও দু’জন বিজিবি সদস্য রয়েছেন। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার বেলা ১২টার দিকে সুলতানা রিজিয়া বানু নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের ইউনিয়ন সমাজসেবী পদে কর্মরত ছিলেন। একই সঙ্গে করোনার উপসর্গ নিয়ে শনিবার রাতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, করেনাভাইরাস উপসর্গ নিয়ে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের ভূষিমাল ব্যবসায়ী আপেল হোসেন মৃত্যুবরণ করেছেন। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে গতকাল রোববার সকালে তার মৃত্যু হয়। নমুনা সংগ্রহ করে মরদেহ বিশেষ ব্যবস্থায় দাফন করা হয়েছে। আপেল হোসেন (৩২) সাহারবাটি গ্রামের চারচারা পাড়ার আব্দুল মতিনের ছেলে। এদিকে, মেহেরপুরে গতকাল রোববার নতুন একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাব থেকে পাওয়া ২২টি নমুনার ফলাফলে একজনের পজিটিভ আসে। আক্রান্ত ওই ব্যক্তি গত ১৬ জুন পাবনা থেকে ফিরেছেন।
উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া আপেল হোসেনের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। শনিবার রাতে শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণ সন্দেহে আপেলকে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ভোরে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় রেফার করেন। অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম রিয়াজুল আলম বলেন, আপেলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় মরদেহ দাফন ও পরিবারের লোকজনকে কোয়ারেন্টিনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে শনিবার সকালে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনাভাইরাস আক্রান্ত আওয়ামী লীগ নেতা হাজি মুহিত (৬৮) মৃত্যুবরণ করেন। শনিবার রাত পর্যন্ত মেহেরপুর জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা চার। মোট আক্রান্ত ৪১ আর সুস্থ হয়েছেন ১৫ জন।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ায় নতুন করে আরও ৩৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে চারজন ব্যাংক কর্মকর্তা, দু’জন পুলিশ ও দু’জন বিজিবি সদস্য রয়েছেন। রোববার রাতে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডাক্তার এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে জেলার ১৮২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৩৭টি ফলাফল পজিটিভ আসে। আক্রান্তদের মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১৪জন, ভেড়ামারা উপজেলায় ৬জন, মিরপুর উপজেলায় ৫জন, কুমারখালী উপজেলার ৬ জন ও দৌলতপুর উপজেলায় ৬ জন। আক্রান্তদের মধ্যে চারজন ব্যাংক কর্মকর্তা, দু’জন পুলিশ সদস্য ও দুজন বিজিবি সদস্য রয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৮৪ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত তিনজন মারা গেছেন। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯৭ জন রোগী।
অপরদিকে, কুষ্টিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে করোনার উপসর্গ নিয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুলতানা রিজিয়া বানু (৫৮) মারা যান। তিনি কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের ইউনিয়ন সমাজসেবী পদে কর্মরত ছিলেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, সুলতানা রিজিয়া বানু করোনায় আক্রান্ত হয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. তাপস কুমার সরকার বলেন, শনিবার রাত ১২টার দিকে শহরের কোর্টপাড়া কাজী নজরুল ইসলাম সড়কের বাসিন্দা মৃত মোল্লা ফকির মহম্মদের স্ত্রী সুলতানা রিজিয়া শ্বাসকষ্ট নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি হন। রোববার দুপুর ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। শনিবার সকালে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রাতেই জানা যায় তার করোনা পজিটিভ। এ নিয়ে কুষ্টিয়া জেলায় করোনাভাইরাসে তিনজনের মৃত্যু হলো। এদিকে, করোনার উপসর্গ নিয়ে শনিবার রাত ১০টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভেড়ামারা উপজেলার কাচারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা বুলবুল আহম্মেদের (৪৮) মৃত্যু হয়েছে। পারিবারিক সূত্র জানায়, এক সপ্তাহ ধরে জ্বর, ঠান্ডা ও কাশির সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। শনিবার সন্ধ্যায় শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে পারিবারের লোকজন তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। রাত ১০টার দিকে তিনি মারা যান। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে ১৩ জনের মৃত্যু হলো। জেলায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৪৭ জন।