ভয়াবহ করোনা মহামারির মধ্যে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ এলাকায় ইজিবাইক বা অটো রিকশা ছিনতাই চক্রের অপতৎপরতা বেড়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে পৃথক ৩টি স্থান থেকে তিন চালককে অজ্ঞান করে তিনটি অটো রিকশা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। শুক্রবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত একটি ইজিবাইকও উদ্ধার হয়নি। অজ্ঞান করে ইজিবাইক ছিনিয়ে নিয়ে পালানো চক্রের একজন সদস্যকেও গ্রেফতারের খবর গতকাল পযন্ত্রপত্রস্থ হয়নি। অজ্ঞান করে রাস্তার পাশে চালককে ফেলে রেখে ইজিবাইক বা অটো রিকশা নিয়ে চম্পট দেয়া প্রতারকদের ধরে আইনে সোপর্দ করতে না পারলে ওদের অপতৎপরতা যে দিন দিন বাড়তেই থাকবে তা বলাই বাহুল্য।
কালের বিবর্তনে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক উন্নতি হয়েছে। প্যাডেল চেপে চালানোর বদলে এখন পুনশক্তি সঞ্চালনযোগ্য ব্যাটারির শক্তি দিয়ে ঘোরানো হয় হালকা যানের চাকা। চালানো সহজ। সে কারণে আধুনিক রিকশার নামও দেয়া হয়েছে ইজিবাইক। এসব বাইক আবিষ্কার হওয়ায় শুধু অল্পদূরুত্বে যাওয়া আসা সহজই হয়নি, কর্মসংস্থানও হয়েছে বহু বেকারের। অথচ এ যান ও যান চালকদের নিরাপত্তার তেমন ব্যবস্থা করা হয়নি। না আছে রেজিস্ট্রেশন নম্বর, না আছে চালকের ন্যূনতম প্রশিক্ষণ এবং চালকের অনুমোদন। ফলে সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। এরপর যুক্ত হয়েছে চালককে অজ্ঞান করে ইজিবাইক ছিনিয়ে নেয়ার প্রবণতা। অজ্ঞান করে ইজিবাইক ছিনিয়ে নেয়ার পর ওরা সহজেই তা বিক্রি করতে পারে। শুধু অজ্ঞান করে নয়, খুন করে ইজিবাইক ছিনিয়ে নেয়ারও উদাহরণ রয়েছে এলাকায়।
গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে চালককে অজ্ঞান করে ইজিবাইক ছিনিয়ে নেয়ার সংক্ষিপ্ত চিত্র উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গার একজনকে অটোচালককে মেহেরপুরের পল্লি এলাকায় নিয়ে অজ্ঞান করে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে প্রতারক ছিনতাইকারীরা পালিয়ে গেছে। রাস্তার পাশে যখন ওই যুবক পড়েছিলো তখন তার কাছে পথচারীদের তেমন কেউই এগিয়ে যাননি। ভয়ানক ছোঁয়াছে রোগ কোভিড-১৯ আতঙ্কে কেউ না গেলেও শেষ পর্যন্ত মেহেরপুরের একটি ক্যাম্পে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি অজ্ঞান যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। পকেটের টাকা দিয়ে কিছু ওষুধও কিনে দিয়েছেন। অনন্য এ দৃষ্টান্তস্থাপনকারী পুলিশ কর্মকর্তা অবশ্যই অভিবাদন পাওয়ার দাবি রাখে। তিনি দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে যুবকের প্রাণও ঝরতে পারতো।
অটো রিকশা বা ইজিবাইক যারা চালান তাদের অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। করোনা ভাইরাসের কারণে যাত্রীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। তারপরও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ভাইরাস ছড়াতে সহয়তার অভিযোগ রয়েছে। এরপর যদি বাড়তি আয়ের জন্য অযৌক্তিক যাত্রীকে নিয়ে যুক্তিহীন দূরের পথে পা বাড়ান তা হলে তাকে কি সচেতন চালক বলা যায়? যে ক’জন চালক অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে ইজিবাইকসহ টাকা হারিয়েছেন তাদের প্রায় সকলেই দূরের পথে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বিষয়টি চালকদের যেমন উপলব্ধি করে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, তেমই আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী সংস্থাসমূহের দায়িত্বশীলদের হতে হবে কর্তব্যপরায়ন।
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ