ম্যাজিস্ট্রেট চিকিৎসকসহ আরও ৩৫ জনের শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় নোভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গতকাল শনিবার সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট ৭৮ জনের শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে জেলা প্রশাসনের দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসক, আলমডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী, দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুজন স্বাস্থ্যকর্মী ও জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৭৮ জনে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দু’জন ও মারা গেছেন ১ জন। শনিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ও শনিবার সকালে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব থেকে মোট ১০৮টি নমুনার প্রতিবেদন আসে। এর মধ্যে ৩৫ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। সদর উপজেলার ১৭ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৯ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ৮ জন ও জীবননগর উপজেলার একজন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে জেলা প্রশাসনের ২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, অফিস সহকারী একজন, সদর উপজেলার সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসক, দুজন স্টাফ নার্স, একজন স্বাস্থ্যকর্মী, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসের একজন, হিসাবরক্ষণ অফিসের একজন, শহরের গুলশানপাড়ায় একজন, দৌলতদিয়াড়ের একজন, বড়শলুয়ার দুজন, হিজলগাড়ি গ্রামে দুজন, মাখালডাঙ্গার একজন, টেংরামারীর একজন। এছাড়া আলমডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী, দামুড়হুদার উজিরপুর গ্রামের ৫জন, পুরাতন হাউলীর একজন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুজন স্বাস্থ্যকর্মী ও জীবননগরের একজন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই কন্ট্রাক্ট বেসিজ। মূলত করোনা পজিটিভ লোকের সংস্পর্শে এসে তারা আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে যাঁরা এসেছেন, তারাও সংক্রমিত হচ্ছেন।’
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দুজন কর্মচারী, সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের একজন চিকিৎসক, দুজন সিনিয়র স্টাফ নার্স রয়েছেন। জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘সারা দেশের মতো চুয়াডাঙ্গাতেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। আজ (শনিবার) শুনেছি এক চিকিৎসকের করোনা পজিটিভ।’ নতুন ৩৫ জনসহ জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৭৮ জনে। যার মধ্যে একজন করোনা শনাক্তের আগেই মারা গেছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪ জন। ১৬ জন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ও ৫৭ জন হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। এছাড়া বর্তমানে ভাইরাস সংক্রমিত জেলা ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ হতে চুয়াডাঙ্গায় আসা ৪৩৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে, ১৭ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে, ২৬ জনকে হোম আইসোলেশনে ও ১৪ জনকে হাসপাতাল আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর উপজেলায় প্রথম দুই করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। শনিবার চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিস হতে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। আক্রান্তরা হচ্ছেন উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের একজন জনপ্রতিনিধির ছেলে (২৫) ও কুলতনা গ্রামের ভাংগারী ব্যবসায়ী (৫৫)। এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এ উপজেলাবাসীর মনে।জানা যায়, উপজেলার আলীপুর গ্রামর জনপ্রতিনিধির ওই ছেলে কুমিল্লায় একটি পাবলিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। গত সপ্তাহে তিনি জ¦র ও সর্দি-কাশি নিয়ে বাড়ি ফেরেন। অন্যদিকে ভাংগারী ব্যবসায়ী ব্যবসায়ীক কাজে ঢাকায় অবস্থানকালে করোনায় আক্রান্ত হন বলে জানা গেছে। প্রশাসন তাদের আইসোলোশন নিশ্চিত করণসহ তাদের বাড়ি লকডাউন করেছে। জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাহমুদ বিন হেদায়েত সেতু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শনিবার চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান সাংবাদিকদের জানান, গত ২৪ ঘন্টায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১০৯টি নমুনা নিয়ে পরীক্ষার জন্য যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় ল্যাবে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ৩৫ জনরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে জেলা প্রশাসনের ২ জন ম্যাজিস্ট্রেট, সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ও আলমডাঙ্গা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ৯ জন স্বাস্থ্য কর্মী রয়েছে। এ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলায় শনিবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৭৮ জনে। এর মধ্যে ২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং একজন মারা গেছেন।
দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদা উপজেলায় নতুন করে আরো ৯ জন করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে দমুড়হুদা উপজেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাড়ালো ১৬ জনে। নতুন আক্রান্তরা হলো দামুড়হুদার উজিরপুর গ্রামের ৫ জন, পুরাতন হাউলি গ্রামের ১জন ও দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের বয়স ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। এদের মধ্যে ৪ জন মহিলা ও ৫ জন পুরুষ। দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া ৬ জনই সম্প্রতি ঢাকা থেকে এসেছে। গতকাল শনিবার দুপুরে এদের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল শুভ জানান, গত বৃহস্পতিবার ১৪ মে ১১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে যশোর জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয় ল্যাবে পাঠানো হলে গতকাল শনিবার দুপুরে ৯ জনের রিপোর্ট পজেটিভ ও ২ জনের নেগেটিভ আসে। যে দুইজনের নেগেটিভ আসে তারা হলো দামুড়হুদা সদরের তৈয়ব আলীর ছেলে আরিফুল ও মহাশিন দর্জির মেয়ে শারমিন। আক্রান্তদের মধ্যে ২জনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ১জনকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও বাকী ৬জনকে নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসন, দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ আক্রান্তদের বাড়ীসহ আশপাশের বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে।