আজ ১৩ রমজান। রোজার মাস কুরআনের মাস। শুধু কুরআন নয়, পূর্বেকার সকল আসমানী কিতাবের সাথে এই মাসের এক খাস সম্পর্ক আছে। বিগত বছরগুলোতে সুন্নত হিসেবে সারা বিশ্বের মুসলিম জনতার সাথে বাংলাদেশের মুসলিমগণও তারাবির নামাজে মসজিদে মসজিদে কুরআন খতম করে আসছিলেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে এবার সেটা তেমন হচ্ছেনা। তবে গতকয়েক দিন ধরে তারাবির নামাজে নিজ নিজ বাড়িতে হাফেজদের মাধ্যমে অনেকেই কুরআন শরিফ খতম পড়াচ্ছেন। কেউ কেউ আবার ব্যক্তিগতভাবে নামাজের বাইরেও খতমের নিয়তে কুরআন পড়ছেন। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) কে ফেরেশতা জীব্র্াইল (আ:) রমজান মাসে সম্পূর্ণ কুরআন তেলওয়াত করে শুনাতেন এবং নিজেও আল্লাহর রসুলের কাছ থেকে তা শুনতেন। এই কারণে এটা সুন্নত হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। তাছাড়া রমজান মাসের বিশেষত্ব ও ফজিলতের প্রধান কারণ হলো এই মাসেই মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল হয়। আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা, রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য স্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী (বাকারা: ১৮৫)। শুধু তাই নয়, অন্যান্য বড় বড় আসমানী কিতাবও এই মাসেই নাজিল হয়। হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর সহীফাসমূহ এই মাসের ১ অথবা ৩ তারিখে নাজিল হয়। হযরত দাউদ (আ.) কে ১২ অথবা ১৮ রমজান যাবূর কিতাব দেয়া হয়। হযরত মুসা (আ.) কে ৬ রমজান তাওরাত কিতাব দেয়া হয়। হযরত ঈসা (আ.) কে ১২ অথবা ১৩ রমজান ইঞ্জিল কিতাব দেয়া হয়।
এতে বোঝা যায় যে, আল্লাহপাকের কিতাবের সাথে এই মাসের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। এই কারণেই এই মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলওয়াত করা দরকার। কুরআন হলো একটি জীবন্ত মো’জেজা। হাদিসে এসেছে, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে নিজে কুরআন শরিফ শিখে এবং অপরকে শিক্ষা দেয় (বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিজি)। অন্য এক হাদিসে হুজুর (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কুরআনের একটি অক্ষর পড়বে সে এক নেকি লাভ করবে এক নেকি দশ নেকির সমান হবে। আমি বলি না যে ‘আলিফ-লাম-মীম’ একটি অক্ষর বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর এবং মীম একটি অক্ষর (তিরমিজি)। এই ছওয়াব রমজান ছাড়া অন্যান্য মাসের জন্য প্রযোজ্য। রমজান মাসে এই ছওয়াব কমছে কম আরও ৭০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। অপর হাদিসে রাসুলে কারীম (সা.) বলেন, তোমরা আল্লাহর নৈকট্য ওই জিনিস হতে অধিক আর কোনো জিনিস দ্বারা হাসিল করতে পারবে না, যা স্বয়ং আল্লাহতায়ালা হতে বের হয়েছে, অর্থাৎ কালামে পাক (আবু দাউদ, তিরমিজি)। তাই আসুন, আমরা এই মহিমান্বিত মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলওয়াত করি, কুরআনের অর্থ বুুঝি এবং কুরআনের আলোকে জীবন গড়ি।
(লেখক: অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ