স্টাফ রিপোর্টার: মাস গড়ানোর পর যখন লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, তখনই করোনাভাইরাসের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এই অঞ্চলে। দক্ষিণ এশিয়ার যে দেশগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেশি সেই ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ তিনটি দেশেই গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। ভারতে প্রায় ৪ হাজার, পাকিস্তানে প্রায় দেড় হাজার এবং বাংলাদেশে ৭৮৬ নতুন রোগী পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ৩ হাজার ৯০০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ৩০ জানুয়ারি কেরালায় প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধরা পড়ার পর এক দিনে এত বেশি সংখ্যক রোগী আগে শনাক্ত হয়নি। এর আগে ৩ মে দেশটিতে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬৪৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এক দিনের মধ্যে ওই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেলো। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৩৩৩। আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে সাড়ে ১৪ হাজার। ভারতে এই পর্যন্ত মারা গেছে ১ হাজার ৫৬৮ জন। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মারা গেছে ৫৮৩ জন। মুম্বাইয়ের ধারাবি বস্তিতে ৬৩২ জনের দেহে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে, এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। বিশাল এই বস্তিতে সোমবার এক দিনেই নতুন ৪২ জন রোগী শনাক্ত হয়।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮৫ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। সরকারি হিসাবে, এনিয়ে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩৪৪ জন। মৃতের সংখ্যা ৭ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮। তবে রাজ্যে আরও ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু অন্য অসুস্থতা ছিল বলে তাদের করোনাভাইরাসে মৃতের তালিকায় যুক্ত করা হয়নি। তাদের সংখ্যা যোগ করলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪০। কিস্তানে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৩১৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
পাকিস্তানের সংবাদপত্র ডন জানিয়েছে, এক দিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী ধরা পড়ায় দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ২২৩ জন। মারা গেছে ৫১৪ জন। রোজায় পাকিস্তানে তারাবির নামাজের অনুমতি দিলেও কিছু নিয়ম করে দিয়েছিল; কিন্তু তা উপেক্ষিত হচ্ছে বলে ডন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়।
বাংলাদেশে একদিনে রেকর্ড ৭৮৬ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার হাজার ৯২৯ জন। আরও একজনের মৃত্যুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮৩ হয়েছে। বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীর খোঁজ মেলে গত ৮ মার্চ; তারপর একদিনে এত বেশি নতুন রোগী আর কখনও শনাক্ত হয়নি। বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি চললেও কিছু বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে, যার ফলে বড় ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ নেপালে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সাত রোগী শনাক্ত হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৮২ হয়েছে বলে কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে। নেপালেও সপ্তাহখানেক ধরে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীলঙ্কায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬০ জনে, আর মারা গেছেন ৯ জন। শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯ জন। করোনাভাইরাসে এশিয়াজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই লাখ ছাড়িয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। তবে এই মহাদেশে মৃতের সংখ্যা এখনও ১০ হাজারের কম। এশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বিশ্বের মোট আক্রান্তের ৭ শতাংশ; আর মৃতের সংখ্যা বিশ্বে মোট মৃত্যুর ৪ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ লাখ ২৮ হাজার। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার। সর্বাধিক আক্রান্তের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক ২২ হাজার ২৪৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ২৪০। দেশটিতে মোট আক্রান্ত এখন প্রায় ১২ লাখ, আর মৃতে সংখ্যা ৭০ হাজার। যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যায় ইতালিকে ছাপিয়ে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। দেশটিতে মারা গেছে ২৯ হাজার ৫০২ জন। ইতালিতে ২৯ হাজার ৩১৫। আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির বিপরীতে করোনাভাইরাসের উৎস ভূমি চীনে গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র একজন নতুন রোগী ধরা পড়েছে, আক্রান্ত এই ব্যক্তিও এসেছে বিদেশ থেকে। চীনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮২ হাজার ৮৮১; মৃত্যুর সংখ্যা ৪ হাজার ৬৩৩। সিএনএন জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা গত ৭৭ দিনে সবচেয়ে কম। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৮০৪ জন, এর মধ্যে মারা গেছে ২৫৪ জন। নিউজিল্যান্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন কোনো রোগী ধরা পড়েনি; এনিয়ে ৪৮ ঘণ্টা নতুন রোগী পাওয়া যায়নি দেশটিতে। নিউজিল্যান্ডে মোট ১ হাজার ১৩৭ জন আক্রান্তের মধ্যে ২০ জনের মৃত্যু ঘটেছে।