স্টাফ রিপোর্টার: বর্তমান সময়ে সকলের মাঝেই বিরাজ করছে করোনা আতঙ্ক। সেই সাথে আছে মৃত্যুভয়ও। তবুও ফসল উৎপাদন করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রান্তিক চাষিরা। ঘরে বসে থাকার সুুযোগ নেই যাদের তারা হলেন প্রান্তিক কৃষক। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিয়ম করে খাদ্যশস্য উৎপাদনে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দেশের ক্রান্তিকালে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাখতে এমন নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন চুয়াডাঙ্গার হাজার হাজার কৃষক। করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় দেশে যাতে কোনোভাবেই খাদ্য সংকট তৈরি না হয়; সেজন্য অনেকটা যুদ্ধ করছেন তারা। করোনা ভীতিকে উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়ে খাদ্যশস্য উৎপাদনে মাঠে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। সংকটময় মুহূর্তে দেশের কল্যাণে ভূমিকা রাখায় তাদের এখন প্রধান লক্ষ্য। তবে কৃষকের ঘাম ঝড়ানো উৎপাদিত সেই ফসল বাজারজাতকরণ নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদেরকে। এবার উৎপাদন ভালো হলেও কষ্টার্জিত ফসলের নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।
জেলার সদর উপজেলার বেলগাছি, মাখালডাঙ্গা, দ্বীননাথপুর, গাড়াবাড়িয়া গ্রামসহ প্রতিটি গ্রামেই দেখা গেছে মাঠে থাকা বিস্তীর্ণ জমির ধান কাটছেন কৃষকরা। লক্ষ্য খুব দ্রুততম সময়ে ধান কেটে পরবর্তী ফসলের জন্য বীজতলা প্রস্তুত করা। কেউ কেউ আবার ভুট্টা কর্তনের পর নতুন বোরা ধান লাগাতে ব্যস্ত। শুধু ধান নয়, মরসুমি ফল তরমুজ, লাউ, পেঁপে, বেগুন, শশা, করলা, ধনেপাতাসহ নানা ধরনের সবজি উৎপাদনে দিনরাত পরিশ্রম করছেন কৃষকরা।
গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দীন বলেন, আগে তাদের উৎপাদিত পণ্য মাঠ থেকেই বিক্রি হয়ে যেতো। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা আসতো। কিন্তু করোনার কারণে এখন তারা আসতে পারছেন না। আমরা চাষিরা যে নিজেরা ট্রাকে করে নিয়ে যাবো সেখানেও বিপত্তি। এই করোনা সংকটে ঢাকাতে পরিবহন খরচ যেখানে ১০ হাজার টাকা ছিলো তা এখন দ্বিগুণ। সব মিলিয়ে বাম্পার ফলন ফলিয়েও নতুন এক সংকটের মধ্যে এ পরতে হচ্ছে আমাদের।
চুয়াডাঙ্গার মাখালডাঙ্গা গ্রামের কৃষক লতিফ ম-ল জানান, মাঠের ধান কাটতে আরও কয়েকদিন সময় লাগতো। তারপরও তারা আগে ভাগেই ধান কাটছেন। দ্রুত সময়ে এ ধান কেটে বাজারে বিক্রি করে খাদ্য সংকট যাতে দেখা না দেয় তাই তাদের লক্ষ্য। একই সাথে দ্রুত জমি তৈরি করে নতুন ফসলের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন।
অপর কৃষক আব্দুর রহমান জানান, করোনার ভয়কে তুচ্ছ করে তারা মাঠে আছেন। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে এই সংকটে তারাও সরকারকে সহায়তা করতে চাই। এক্ষেত্রে কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে কৃষকের ঘাম ঝড়ানো উৎপাদিত ফসল বাজারজাতকরণ নিয়ে। করোনা পরিস্থিতিতে বাইরের জেলা থেকে ব্যাপারী ও ব্যবসায়ীরা জেলায় আসতে না পারায় এ সংকটের মূল কারণ বলে তিনি মন্তব্য করেন। এমন বাস্তবতায় হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও কষ্টার্জিত ফসলের নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।
কৃষি উদ্যোক্তা খাইরুল ইসলামের মতে, কৃষি শিল্পে এমন বিরূপ প্রভাব দ্রুত কাটিয়ে ওঠা না গেলে দেশের খাদ্য সংকটের আশঙ্কা থেকেই যাবে। এমন বাস্তবতায় দ্রুত এ সংকট নিরসনসহ কৃষি ও কৃষকদের বাঁচাতে সরকারি প্রণোদনাসহ বিশেষ সহযোগিতার দাবি তার।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাশরুর জানান, করোনা যুদ্ধে কৃষকরাও সামনের সারির যোদ্ধা। কৃষি সমৃদ্ধ দেশ বলেই তারা করোনা মোকাবেলায় অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। কৃষকদের উৎপাদিত খাদ্য শস্য বিক্রি ও বিপণনের ক্ষেত্রে চুয়াডাঙ্গা কৃষি বিভাগ কাজ করছে। কৃষকরা যেন নির্বিঘেœ তাদের উৎপাদিত পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে নিতে পারেন সেজন্য পণবাহী ট্রাকের সাথে দেয়া হচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রত্যয়নপত্র।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ