ফেসবুক বা মোবাইলে ম্যাসেজ করলেই খাদ্য যাবে বাড়িতে
সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে অসহায়দের পাশে থাকতে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের উদ্যোগ
স্টাফ রিপোর্টার: পুলিশ সুপারের মোবাইলফোনে বা ফেসবুক মেসেঞ্জারে নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিয়ে ম্যাসেজ করলেই রাতের আধারে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে যাবে বাড়িতে। ‘খাদ্য যাবে বাড়ি’ নামে একটি ইউনিক পদ্ধতি চালু করে এ খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও খাদ্য সামগ্রী পেতে আগ্রহীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হেল্প ডেস্কে নাম-ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর এন্ট্রি করেও খাদ্য সামগ্রী পাচ্ছেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণার ফলে কর্মবঞ্চিত গরিব, দুস্থ ও অসহায় দিশেহারা মানুষের কথা ভেবে ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগটি নিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম ‘খাদ্য যাবে বাড়ি’ নামে একটি ইউনিক পদ্ধতি চালু করেন। খাদ্য সামগ্রী পেতে আগ্রহীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হেল্প ডেস্কে নাম-ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর এন্ট্রি করলেই রাতের অন্ধকারে তাদের বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। পুলিশ সুপারের ফোনে নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর এসএমএস বা ফেসবুক মেসেঞ্জারে ইনবক্স করলেও তাদের বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও কোনো অসহায় ব্যক্তি বা লকডাউনে থাকা পরিবার পুলিশ সুপারকে ফোন করে জানালে তৎক্ষণাৎ তাদের নিকট খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন।
‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ এই সেøাগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পুলিশ যখন জনবান্ধব পুলিশিং এ ব্যস্ত, ঠিক সেই সময়ে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে বাংলাদেশেও প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বাংলাদেশ সরকার করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করলে কর্মবঞ্চিত গরিব, দুস্থ ও অসহায় মানুষ যখন অন্ন সংস্থানের অভাবে দিশেহারা, ঠিক তখনই বিষয়টি অনুধাবন করে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে ‘মানুষ মানুষের জন্য, পুলিশ জনগণের বন্ধু, সেবাই পুলিশের ধর্ম’ এই ব্রত সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গা জেলার তৃর্ণমূল অসহায় গরিব দুঃখীদের মাঝে ২৯ মার্চ থেকে ধারাবাহিকভাবে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের কর্মসূচি গ্রহণ করেন।
গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম ইতোমধ্যে কর্মবঞ্চিত গরিব ও দুস্থ ৫ হাজার ১২৬টি পরিবারের মধ্যে ৩ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি আলু, ৫শ’ মি.লি সয়াবিন তেল, ৫শ’ গ্রাম লবণ, একটি লাউ, একটি মিষ্টি কুমড়া, এক প্যাকেট নুডুলস, এক প্যাকেট টোস্ট বিস্কুট, ৫শ’ গ্রাম পেঁয়াজ, ১শ’ গ্রাম গুড়ো হলুদসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী বিভিন্ন সময়ে পৌঁছে দিয়েছেন। এছাড়াও আরও ৫ হাজার পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জানান, দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি কাজটি করে চলেছেন। এ সময় তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার সকল বিত্তবানদের যার যার অবস্থান থেকে গরিব, দুস্থদের সাহায্য করার আহ্বান জানান। একইসাথে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে অনুরোধ করেন।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের এই মহতী কাজের ফলে জেলার সকল শ্রেণির মানুষের কাছে তিনি ইতোমধ্যেই মানবিক এসপি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
অপরদিকে, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে চুয়াডাঙ্গা জেলায় বসবাসরত জনসাধারণকে সচেতন করতে গত ২০ মার্চ থেকে ১২ হাজার লিফলেট বিতরণ, স্বাস্থ্যবিধি সর্ম্পকে জনগণকে সচেতন করতে পুলিশের প্রত্যেক অফিসের সামনে সাইন বোর্ড/ব্যানার প্রদর্শন, প্রত্যেক থানা এলাকার গ্রামে গ্রামে একাধিকবার মাইকিংসহ গান-বাজনার মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সর্ম্পকে সচেতনামূলক প্রচারণা, প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা প্রত্যেক অফিসের সামনে বিল বোর্ড আকারে প্রদর্শন ও হ্যান্ড লিফলেট বিতরণ, পুলিশ সদস্য ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, প্রধানমন্ত্রীর সাথে দু’বার ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ, জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও অনান্য গোয়েন্দা সংস্থার সাথে সমন্বয় সাধন করে সকল কার্যক্রম পরিচালনা, মহামারী দেখা দিলে উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ, অফিসার ও ফোর্সের মধ্যে মনোবল বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাদের ওয়েল ফেয়ার নিশ্চিতকরণ, সরকারি নির্দেশনা মেনে যথাযথ লকডাউন সুনিশ্চিতকরণ, লকডাউনকৃত বাড়িতে লাল পতাকা সংযোজন ও সাধ্যমতো খাদ্য সহায়তা প্রদান, এতিমখানার এতিমদের সাথে ইফতারিকরণ ও ইফতারির প্যাকেট প্রদান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ পরিবার ও কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের বাসায় ঈদ উপহার সামগ্রী প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।