চুয়াডাঙ্গায় ম্যাজিস্ট্রেট চিকিৎসক নার্স স্বাস্থ্যকর্মীসহ একই দিনে ২৮ জন করোনায় আক্রান্ত
আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে লকডাউন ঘোষণা : আক্রান্তদের আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ
মাথাভাঙ্গা অনলাইন: চুয়াডাঙ্গায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ একই দিনে ২৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল সোমবার কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে চুয়াডাঙ্গার ৫১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ওই ২৮ জনের করোনা পজিটিভ আসে। ২৮ জনের মধ্যে আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৭ জন চিকিৎসক, ১০ স্বাস্থ্যকর্মীসহ ১৯ জন এবং সদর উপজেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ ৯ জন রয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৬। আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। জেলার সিভিল সার্জন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্বাস্থ্যবিভাগ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনা পজিটিভ প্রত্যেকের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে ফোন দিয়ে বাড়িতে ‘আইসোলেশনে’ থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সে হিসাবে আজ মঙ্গলবার করোনা পজিটিভ শনাক্ত চিকিৎসক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা দপ্তরে আসেননি। এদিকে নমুনার ৫১ জনের মধ্যে ২৮ জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বিষয়টিকে ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেছেন। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আতাউর রহমান তার ফেসবুক পেজে ‘ভয়ংকর, আগের আটসহ মোট ৩৬ জন করোনায় আক্রান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের তথ্য ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিকে ঢাকায় আইইডিসিআরে নমুনা পাঠানো হতো। পরবর্তী সময়ে তা খুলনা মেডিকেল কলেজ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সর্বশেষ কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। এর আগে নমুনা পরীক্ষায় আইইডিসিআরে দুইজন এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে ছয়জন চুয়াডাঙ্গার বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত হন।
স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আইইডিসিআরের পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে কোনো প্রশ্ন না উঠলেও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফল নিয়ে সন্দেহ দেখা দেওয়ায় ওই ছয়জনের নমুনা নতুন করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। কারণ, উপসর্গহীন অথচ করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত ওই ছয়জনের কারোরই শরীরে আজ পর্যন্ত উপসর্গ দেখা যায়নি।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল নিয়ে সন্দেহ ও বিতর্ক শেষ না হতেই কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবের ফলাফল নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাদী জিয়াউদ্দীন আহম্মেদ বলেন, কুষ্টিয়াতে যাঁরা পরীক্ষা করেছেন, এই ফলাফলকে তাঁরা নিজেরাই সন্দেহজনক বলে মন্তব্য করেছেন। যে কারণে চুয়াডাঙ্গা জেলার করোনা পজিটিভ ২৮ জনের পাশাপাশি করোনা নেগেটিভ ২৩ জনেরও নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।
জেলার সিভিল সার্জন এ এস এম মারুফ হাসান বলেন, অফিশিয়ালি কোনো কাগজ হাতে পাইনি। মৌখিকভাবে জানার পর সংশ্লিষ্টদের বাড়িতে হোম আইসোলেশনে থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৭ জন চিকিৎসক, ২ জন ল্যাব টেকনিশিয়ান, গাড়ির চালকসহ ১৭ জন আক্রান্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। আইইডিসিআরের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার জানান, তিনিও মৌখিকভাবে বিষয়টি জেনেছেন। বিষয়টি ঢাকায় জানানো হয়েছে।