দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এক্ষেত্রে প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে নতুন রেকর্ড। গতকাল শুক্রবার মৃতের ৭৫ জনে পৌছেছে। তবে গত কয়েকদিনে করোনার লক্ষণ নিয়ে আরও বেশ ক’জনের মৃত্যু হওয়ায় ধারণা করা যায় পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলে করোনাভাইরাসে মৃতের প্রকৃত সংখ্যাটা আরও বড় হতো। দুর্ভাগ্যজনক, করোনার নমুনা পরীক্ষা ও এ রোগে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে এখনও মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শুরুতে একটিমাত্র স্থানে পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিলো। বর্তমানে সে সুযোগ বাড়লেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই নমুনা পরীক্ষা থেকে শুরু করে চিকিৎসা পর্যন্ত দুর্ভোগের সীমা নেই।
সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য নমুনা পরীক্ষা করা এখনও দেশে কঠিন কাজগুলোর একটি। এ জন্য অনেক ক্ষেত্রে নাকি প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপও করতে হয়। হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাব্যবস্থাও নাজুক। বস্তুত বর্তমান করোনা সংকট দেশের স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থার চিত্রটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। অনেক হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট নেই। নেই ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা। প্রকৃতপক্ষে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় হযবরল অবস্থা চলছে। একদিকে করোনার চিকিৎসা নিয়ে দুর্ভোগ, অন্যদিকে করোনার চিকিৎসা করতে গিয়ে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা হচ্ছে না ঠিকমতো।
করোনা ছাড়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, চিকিৎসাসেবা না পেয়ে তারা হাসপাতাল ছাড়ছেন। এমনকি অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বন্ধ রেখেছেন প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখা। অনেক রোগী এ হাসপাতাল, সে হাসপাতাল ঘুরে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করছেন বলেও খবর রয়েছে। বস্তুত করোনা আতঙ্কে চিকিৎসক ও নার্সদের একটি বড় অংশ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (পিপিই) স্বল্পতা এবং সাধারণ রোগীরা যে করোনা আক্রান্ত নন, সে বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়ার কারণেই মূলত চিকিৎসাব্যবস্থায় এ সংকট দেখা দিয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মঈন উদ্দীনের দুঃখজনক মৃত্যুও আমাদের চিকিৎসার অব্যবস্থাপনার দিকটিকে উন্মোচিত করেছে। করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় চিকিৎসক ও নার্সদের যথাযথ প্রশিক্ষণেরও অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বস্তুত শুরু থেকে করোনা রোগীর চিকিৎসার ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা স্বাস্থ্য অধিদফতরের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকলে, দিকনির্দেশনা থাকলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। একটিমাত্র জায়গায় করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকায় বহু কোভিড-১৯ রোগীকে সময়মতো শনাক্ত করা যায়নি। ফলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা রয়েছেন মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। উপযুক্ত পিপিই সব করোনা রোগীর সেবকদের কাছে থাকা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া করোনার পরীক্ষা থেকে শুরু করে চিকিৎসা পর্যন্ত কার্যক্রমে যে সমন্বয়হীনতা প্রকাশ পাচ্ছে, তাও দূর করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর এসব সীমাবদ্ধতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে না পারলে দেশে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।