মাথাভাঙ্গাকে বাঁচাতে হবে
অধ্যক্ষ ডা. মো. শাহজাহান আলী
নদীমাতৃক আমাদের এই জন্মভূমি। অসংখ্য জলাভূমি, নালা-খাল, বিল, হাওড় তো আছেই। নদীগুলো এঁকেবেঁকে বাংলাকে আদর দিয়ে ঘিরে রেখেছে। এই ভ‚খণ্ডের সভ্যতা তো নদী কেন্দ্রিক। পাল তোলা কতো বাহারি নৌকা। ময়ূরপক্সখী সাজে ছুটে চলতো তাদের গন্তব্যে। কত রকম পসরা সাজিয়ে। কত নিরাপদ কত কম খরচে ঘাটে ঘাটে পৌঁছে যেতো মানুষের দোর গোড়ে।
এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের মাথাভাঙ্গার কথা তো এমনি চলে আসে। তীর পাড়ের কতো মানুষের কতো প্রয়োজন পড়ে এই মাথাভাঙ্গা নদীর। যখন মানব সভ্যতার প্রকাশ ঘটে তখন থেকেই নদীর পাড়ে পাড়েই বিভিন্ন বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এক সময় এই মাথাভাঙ্গা নদীর কি জৌলুস ছিলো! দুপাড়ের প্রশস্ততা কতো বেশি ছিলো। বর্ষাকালে দুকুল ছাপিয়ে প্রবাহিত হতো কুলকুল ছলছল রবে। মাথাভাঙ্গার যৌবনের জৌলুস-ই ছিল আলাদা।
বড় দুঃখের কথা! পরিতাপের বিষয়! যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড, সরকারি নদী রক্ষা কমিশন প্রভৃতি রয়েছে। সবাই যেন নির্বিকার। যা কিছু প্রচার করে কাগজ সর্বস্ব। সবই যেন দায়সারা, না হলে এতো বালু উত্তোলন, পাড় দখল করে স্থাপনা তৈরি, আবর্জনা ফেলে দূষণ কেমন করে হয়?
চোখের সামনে এমন অসঙ্গতি দেখেই তো চুয়াডাঙ্গার সচেতন নাগরিক মহল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে ‘মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন’ নামে একটি ব্যানারে আপামর জনগণ একত্রে হয়েছে। কিভাবে মাথাভাঙ্গার অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা যায়। দূষণ ও দখল মুক্ত করার অঙ্গীকার এই সংগঠনের। এরই ধারাবাহিকতায় ইঊখঅ (বাংলাদেশ পরিবেশবিদ আইন সমিতি)র পৃষ্ঠপোষকতায় গত ২৩ অক্টোবর ২০২১ ইং শনিবার বেশকিছু সুধী মহল সমš^য়ে সরেজমেিন নৌকা ভ্রমণে যাওয়া হয়। স্বচক্ষে দেখা যায়। গোপনে কোমর দেয়া আছে। পাড়ের গ্রামগুলো থেকে মরা পশু নদীতে ফেলা হয়েছে। বর্জ্য ফেলে দূষণ করা হয়েছে। পাড়ে যত্রতত্র আবাদ করা হচ্ছে। এর সবগুলোই বে-আইনি। এতো বাধার মুখে তার অবাধ প্রবাহ কেমনে টিকে থাকে? এই মাথাভাঙ্গাকে না বাঁচাতে পারা যে আমাদের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন কেননা প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় না রাখলে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে বাধ্য। তখন আর কিছুই করার থাকবে না।
এভাবে বলতে পারি উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজি প্রকৃতিতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে কিন্তু মানবকুলের কাছে তাদের সবার কিছু না কিছু অবদান রাখে। কেউ ফুল ফুটিয়ে সৌন্দর্য ও সুঘ্রাণ ছড়ায়। কেউ ছায়া দান করে, কেউ ফল, কেউ নিজেই খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কেউ জ্বালানি আসবাবপত্র। সবচেয়ে বড় কথা প্রাণিকুলের বেঁচে থাকার বড় নিয়ামক শ্বাস-প্রশ্বাসে অক্সিজেন সরবরাহ করে। অর্থাৎ তারা বোবা সন্তান। কিছুই চায় না শুধু দিতে ভালোবাসে। তদ্রুপ- নদী মানুষের কল্যাণই বয়ে আনে। পলি বয়ে কৃষি জমিকে ঊর্বর করে, সুপেয় পানি কৃষি সেচে ব্যবহার হয়, অবাধ প্রবাহে কত রকম দেশীয় মাছ জন্মে তা ধরে কত গরিব মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয়। জলপথে কম খরচে পণ্য সামগ্রী আদান প্রদান হয়। এতকিছু অবদানের পরও কেন আমরা মাথাভাঙ্গাকে সঙ্কুুচিত করছি? অবৈধ স্থাপনা, বালু উত্তোলন বা জবর দখল এখনই তা প্রতিহত করার
শপথ নিতে হবে। তাই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন’ এর পক্ষ থেকে উদাত্ত¡ আহবান জানায় আপামর চুয়াডাঙ্গাবাসীকে তথা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চায়। আমাদের লক্ষ্য বর্ষাকালে দু’কূল ছাপিয়ে যতদূর জলবেষ্টিত হয় যতদূর ততদূরই নদীর প্রশস্ততা থাকবে। এর কোন বিকল্প নেই, ভাবার সুযোগ নেই। এ সংগঠনের একটাই চ্যালেঞ্জ নদীর অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতেই হবে। মঙ্গলজনক কাজে কেন সাড়া পাবো? অবশ্যই এগিয়ে আসবে সবাই। জনগণকে সচেতন হতেই হবে। আমাদের ঐতিহ্য রক্ষার্থে আমরা যখন তৎপর হবো তখন সুবিধাবাদীরা আর সুযোগ পাবে না। প্রশাসন এবং অন্যান্য সংগঠন তো আমাদের পাশেই আছেন।