নিশি পারভীন:
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের নাম ‘গণরুম’। রুম নাম্বার ১০৯। ছোট্ট একটি রুম। ছোট ছোট বিছানা। তাতে কি! ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের এই রুমটিই আমাদের কাছে একটি রাজ্য। যে রাজ্যে আমরা সবাই রাজা। যে রাজ্যে ‘আমার’ বলে কিছু নেই। রয়েছে নিজ নিজ স্বাধীনতা, নেই কোন বাঁধা। আমরা রুমে ৮ জন থাকি। যেন ছোট খাটো একটি পরিবার। আয়শা, সাদিয়া, অন্তরা, তা নি, আফসানা, খুশি, মিম মিলে আমরা সকলেই একটি পরিবার। অগনিত স্মৃতি, খুনসুটি, ভালোবাসা জড়িয়ে আছে তা ছোট পরিসরে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। সবাই মিলে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়া, একসাথে ট্রুথ-ডেয়ার খেলা, একই রুমে থেকেও ভিডিও কলে কথা বলা, মাঝ-রাতে নাচ-গান করা, রাত জেগে আড্ডা দেওয়া। আহা! সব যেন আজ স্মৃতির পাতায় স্থান পেয়ে গেছে। সাদিয়া ছিল আমাদের নাচের গুরু। অনেক ভালো নাচ করে, যখনই ওর মন খারাপ হতো তখনই নাচতো, ওর ধারণা ছিল নাচলে মনের মধ্যে চাপা কষ্টগুলো দূর হয়। মিম ছিল রান্নায় সেরা, বাহারী রকমের নান্না জানতো সে। মিমের হাতের নুডুলস্ এখনও মুখে স্বাদ লেগে আছে। খুব ভালো করে অন্যকে হিজাব পরিয়ে দিত পারতো সে। আমরা সকলেই কোন অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে ওর কাছ থেকে হিজাব পরিয়ে নিতাম। আয়শাটা সারাদিন বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করত। আমাদের ক্যাম্পাসে ভর্তি হওয়া বছরখানেক হলেও আজ পর্যন্ত কেউ মেয়েটিকে পড়তে বসতে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। রুমের ঘুম কুমারী ছিল খুশিমনি। সারা দিনরাত ঘুমালেও ক্লান্তি তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। একদম বাচ্চাদের মতো করে কথা বলতো সে, আর তার সাথে রুমে মাঝে মাঝেই পাঁচকড়ি খেলতাম। আমার বাসা পাবনা। আমাকে রাগিয়ে তোলার জন্য তানি একটু পর পরই বলতো এই নিশি, তোর বাসাটা যেন কোথায়? আমিও মজা করে তাকে উত্তর দিতাম। বলতাম পামপা। বন্ধুদের খুবই মিস করি।