অ্যাডঃ তুহিন আহমেদ
কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পরেই কেবল তার সম্পত্তিতে সন্তানদের অংশিদারিত্ব সৃষ্টি হয়। কোনো মুসলিম ব্যক্তির মৃত্যুর সময় যদি কোনো পুত্রসন্তান না থাকে, শুধু একজন মেয়ে সন্তান থাকে তাহলে ওই মেয়ে তার পিতার মোট সম্পত্তির অর্ধেক অংশ পাবেন। ধরা যাক, রাজু ১০ বিঘা সম্পত্তির মালিক। তিনি শুধু একটি মেয়ে সন্তান রেখে মারা গেলেন। ওই মেয়ে একা ৫ বিঘা সম্পত্তির অংশীদার হবেন। আবার মৃত ব্যক্তির যদি দুই বা ততোধিক মেয়ে থাকেন এবং কোনো পুত্রসন্তান না থাকে, তাহলে ওই দুই বা ততোধিক মেয়ে একত্রে মৃত পিতার মোট সম্পত্তির তিন ভাগের দু ভাগ পাবেন। ধরা যাক, মানিক ১৫ বিঘা সম্পত্তির মালিক। তিনি মৃত্যুকালে ৪ মেয়ে রেখে মারা যান। ওই ৪ মেয়ে ১৫ বিঘা সম্পত্তির মধ্যে একত্রে ১০ বিঘা সম্পত্তির মালিক হবেন। আবার মৃত ব্যক্তির যদি ছেলে এবং মেয়ে উভয় ধরনের সন্তান থাকে তবে ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে ২:১ অনুপাতে সম্পত্তি বণ্টিত হবে। অর্থাৎ প্রত্যেক ছেলে যতোটুকু সম্পত্তি পাবেন, প্রত্যেক মেয়ে তার অর্ধেক সম্পত্তি পাবেন। ধরা যাক, দীপ ১২ বিঘা সম্পত্তির মালিক। তিনি মৃত্যুর সময় এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে মারা যান। তাহলে ছেলে ৮ বিঘা এবং মেয়ে ৪ বিঘা সম্পত্তি পাবেন। তবে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৪ ধারার বিধান অনুযায়ী- পিতা বেঁচে থাকাবস্থায় সন্তানের মৃত্যু হলে সেই মৃত সন্তানের ছেলে-মেয়েরা দাদা/নানার কাছ থেকে ততটুকু সম্পত্তিই পাবেন, যতটুকু তাদের পিতা/মাতা বেঁচে থাকলে পেতেন। এরূপ অবস্থায় মৃত ব্যক্তি যদি শুধু মেয়ে রেখে মারা যান, তাহলে মৃত ব্যক্তির মেয়ে তার দাদা/নানার কাছ থেকে ততটুকু সম্পত্তিই পাবেন, যতটুকু তার পিতা/মাতা বেঁচে থাকলে পেতেন। এরূপ অবস্থায়, একমাত্র মেয়ে হওয়ার কারণে মৃত পিতা/মাতার প্রাপ্ত সম্পত্তির সম্পূর্ণ অংশের মালিক হবেন মেয়ে। ধরা যাক, শোভনের পিতা বেঁচে থাকাবস্থায় শোভন সালমা নামের একটি মেয়ে রেখে মারা যান। শোভনের পিতার মৃত্যুর পর মৃত শোভন তার অংশ অনুপাতে পিতার নিকট হতে ৬ বিঘা সম্পত্তির অংশীদার হলেন। এরূপ অবস্থায় ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৪ ধারার বিধান অনুসারে মৃত শোভনের একমাত্র মেয়ে সালমা এই ৬ বিঘা অর্থাৎ শোভনের সম্পূর্ণ সম্পত্তির মালিক হবেন, মৃত শোভনের স্ত্রী জীবিত থাকলেও স্ত্রী সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবেন। কারণ শোভনের পিতার মৃত্যুর পূর্বেই শোভনের মৃত্যু হয়েছে। উল্লেখ্য, মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৪ ধারার বিধান ১৯৬১ সালের ১৫ জুলাই হতে কার্যকরী হয়েছে।
অ্যাডঃ তুহিন আহমেদ
জজ কোর্ট, চুয়াডাঙ্গা।