নগর সংস্কৃতি : চীনা শিল্পীদের মুগ্ধ পরিবেশনা
শিল্পকে রাষ্ট্রের সীমারেখা দিয়ে আলাদা করা যায় না। চিরায়ত শিল্প সব দেশে সব কালে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছে, কারণ তারা মানুষের কথা বলে। মানুষের দুঃখ-বেদনার আর আনন্দের কথা বলে। চীনের তিয়াজজিন সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনা গতকাল বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করলো।
চীনা নববর্ষ ও বসন্ত উত্সব উপলক্ষে বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার, ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে দু’দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক আয়োজনের শরু হলো গতকাল রবিবার। মনোজ্ঞ এই সাংস্কৃতিক আয়োজনে ছিল মার্শাল আর্ট, অ্যাক্রোবেটিক, একক সঙ্গীত, সমবেত সঙ্গীত, যন্ত্রসঙ্গীত ও নৃত্য।
শুরুতেই ছিল চীনা মার্শাল আর্ট। ‘ফিস্ট অব লিজেন্ড’ শিরোনামের এই আয়োজনে চীনের এই শিল্পের নানা প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে আবারো মঞ্চে ফুটে উঠেছে চীনের সভ্যতা এবং এই রাষ্ট্র নির্মাণের নানা বিষয়। এরপর ছিল অ্যাক্রোবেটিক পরিবেশনা ‘রোটেড ব্লানকেট। চীনের অপেরা শিল্পী যারা হুয়াডান্স নামে পরিচিত তারা কম্বল দিয়ে ভিন্নরকম কসরত প্রদর্শন করে। এরপর সুয়না যন্ত্রশিল্পীরা সুরের মুর্ছনায় আবাহন করেন বসন্তকে। সুরের মুর্ছনা শেষে ‘ওড টু লোটাস’ পর্বে মেয়েরা পদ্মফুলের মতোই নেচে নেচে বিমোহিত করে দর্শকদের। সাইকেলে চড়ে হাতে পায়ে বল হাতে নানা কৌশল প্রদর্শন করেন শিল্পীরা। চীনের ঐতিহ্যবাহী বক্সিং আদলে উপস্থাপিত হয় মার্শাল আর্ট। ‘দ্য সিল্ক রোড ক্যামেল’ নামের একটি যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশিত হয়। ফুলগুলো কেন এত লাল শিরোনামে তাজিক লোকসঙ্গীতের সঙ্গে ফুলের প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও মুগ্ধতা প্রকাশ পায় নৃত্যের ছন্দে। ‘জিজিটসু’ নামের অ্যাক্রোবেটে জটিল সব শারীরিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শারীরিক সক্ষমতার প্রকাশ ঘটে। চীনা ভাষায় এটিকে বলা হয় থি চি। এই প্রাচীন নৃত্যঢংয়ে উঠে এসেছে শান্তি ও সৌহার্দ্যের বাণী। এর পরের পর্বটি ছিল চীনা শিল্পীদের কণ্ঠে বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতের পরিবেশনা। বসন্তভিত্তিক চীনের লোকগানের যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশনাটি মাতিয়েছে মিলনায়তনের সবাইকে । এরপর বেশ কিছু চ্যালেঞ্জিং অ্যাক্রোবেটিক ও মার্শাল আর্ট পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই উত্সবের প্রথম দিনের আয়োজন। এর আগে উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং চিয়াং। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী।
চীনা ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে শুরু হয়েছে দুইদিনব্যাপী ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী। সকালে চীনা বর্ণমালার ক্যালিগ্রাফি নিয়ে ব্যতিক্রমী প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। চারুকলার বকুলতলায় গতকাল ছিল প্রদর্শনীর উদ্বোধনী আয়োজন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং চিয়াং, বাংলাদেশ-চায়না পিপলস ফ্রেন্ডশিপ এসোসিয়েশন, চায়নিজ এসোসিয়েশন ফর ফ্রেন্ডশিপ উইথ ফরেন কান্ট্রিস, আনিয়ান মিউনিসিপাল গভর্নমেন্ট অফ হেনান প্রভিন্স ও ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ চায়নিজ রাইটিং, পেইন্টিং অ্যান্ড ক্যালিগ্রাফি একাডেমির উদ্যোগে এই প্রদর্শনী। অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চীন ও বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক আরো গভীর করতে এ আয়োজন। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের আগে থেকেই দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। বৌদ্ধ ধর্মকে কেন্দ্র করে এ সম্পর্ক শুরু হয়েছিল। দুই দেশের সম্পর্কে ভাষা খুব গুরুত্বপূর্ণ, ক্যালিগ্রাফি ভাষার বিকাশ ঘটাতে পারে। সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো ত্বরান্বিত হতে পারে।’
রাষ্ট্রদূত মা মিং চিয়াং বলেন, ‘চীনা বর্ণ হাজার বছর ধরে অবিকৃত রয়েছে। এসব বর্ণ ও ক্যালিগ্রাফি সভ্যতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। এর দ্বারা প্রাচীন মানুষের অসাধারণ প্রতিভাও প্রকাশিত হয়।’ বক্তব্য রাখেন চায়নিজ অ্যাসোসিয়েশন ফর ফ্রেন্ডশিপ উইথ ফরেন কান্ট্রিসের কর্মকর্তা জি ওয়ে, বাংলাদেশ-চায়না পিপল ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. বশির উল্লাহ প্রমুখ। ২ দিনব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অতিথিরা। আজ সোমবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত জয়নুল গ্যালারিতে ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী সকলের জন্য উন্মুক্ত।
চলচ্চিত্র উত্সবে গতকাল ৪৬
চলচ্চিত্র দেখানো হয়
১৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে রবিবার চতুর্থ দিনে ৫টি ভেন্যুতে ৪৬টি চলচ্চিত্র দেখানো হয়। সমাপনী অধিবেশন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সেমিনারে বক্তারা বলেন, ‘ভালো দর্শক পেতে হলে অবশ্যই ভালো মানের ছবি তৈরি করতে হবে। একটি চলচ্চিত্র যে কোনো দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, যদিও সেই ছবিটি নির্মিত হয় ভালো গল্পের ভিত্তি করে। দর্শকদেরও রুচিবোধ পরিবর্তন আনতে হবে। উত্কৃষ্ট মানের দেশি-বিদেশি ছবি দেখতে হবে। তবেই চলচ্চিত্রের সমন্বিত উন্নয়ন হতে বাধ্য’।