মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গার মানুষের ঘরে ঘরে চলছে প্রচার

বিদ্যুৎ বিলের কপিতে শেখ হাসিনার স্লোগান

স্টাফ রিপোর্টার: গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা আকড়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন হয়। অবশেষে স্বৈরাচার অপবাদ মাথায় নিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তিনি দেশত্যাগ করলেও রেখে গেছেন নিজের আস্থাভাজন কিছু কর্মকর্তা। যার ফলে তিনি দেশের বাইরে থেকেও মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর ভালো কাজের উদ্যোগ। মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার মানুষের ঘরে ঘরে চলছে শেখ হাসিনার প্রচার। শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এমন সেøাগান লেখা সংবলিত বিদ্যুৎ বিল মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার সব কয়টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এ অফিস গুলো। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। অনেক গ্রাহক এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আর এ কাজে সহযোগিতা করছে খোদ মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার স্বদেশ কুমার ঘোষ। তবে এ বিষয়ে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার স্বদেশ কুমার ঘোষ বলেছেন, অর্থ অপচয় রোধ করতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এ কপি গুলোর স্টোক শেষ হলে আর এমন হবে না। শেখ হাসিনা সরকার পতনের ৬ মাস পার হয়েছে। রাষ্ট্রীয়সহ বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে তার নাম মুছে গেলেও বাদ যায়নি মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় থাকা জেলা ও উপজেলা গুলোতে। শেখ হাসিনার উন্নয়নের প্রচার এখনও অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় থাকা ৭ উপজেলা ১ থানা এলাকারা লাখ লাখ গ্রাহক রয়েছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর থেকে সারাদেশে শেখ হাসিনার নাম, ফলকসহ টাঙানো ছবিও সরিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু এখনো বাদ হয়নি মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় থাকা বিদ্যৎ বিলে শেখ হাসিনার স্লোগান । এখনো বিলে শেখ হাসিনা উন্নয়নের প্রচার বার্তা চালানো হচ্ছে। অক্টোবর-নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসের বিলের কাগজেও তা এখনো দৃশ্যমান রয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক, বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে চলছে ক্ষোভ ও আলোচনা-সমালোচনা। মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার স্থানীয় মানুষেরা অভিযোগ করে বলেন, ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর ৬মাস সরকার পরিবর্তন হলেও বিদ্যুৎ বিলের রশিদ পরিবর্তন করা হয়নি। বরং সেই সরকারের ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ সেøাগান সম্বলিত রশিদে বিল তৈরি অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে কেউ কথা বলতে পারেনি। নানা সময়ে ভূতুরে বিদ্যুত বিলের মাধ্যমে গ্রাহক হয়রানী, কখনো বিনা নোটিশে লাইন কেটে হয়রানীসহ সরাসরি দলবাজির অভিযোগ রয়েছে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার স্বদেশ কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে। একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিতি তৈরি করেছিলেন এই জেনারেল ম্যানেজার। আওয়ামী লীগের সময় কেউ কোনো কথাই বলতে পারতো না। এখন মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে। হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। তাহলে তার নামে বিদ্যুৎ বিল থাকে কি করে? মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ধানখোলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আখেরুজামান বলেন, বিগত সরকারের বিভিন্ন স্তরে আওয়ামী লীগের দোসররা এখনো আছে সেই আগের মতো। যার কারণে মায়া-মমতা ত্যাগ করতে পারছে না এখনো। আওয়ামী লীগের সরকারের যে সেøাগান ছিল এখনো বাদ না দিয়ে তা ব্যবহার করছে। এই কর্মকর্তারা হয়তো এখনো আশায় আছে আগামীতে আবার হয়তো আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে আবার চলে আসবে। সেই আশায় হয়তো এগুলো করছে। এ বিষয়ে বর্তমান সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি দ্রুত এসব কর্মকর্তাকে সরিয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে আরও বড় ক্ষতি হবে। ফেব্রুয়ারি মাসের আন্দোলন উপলক্ষে শেখ হাসিনাকে খুশি করতেই হয়তো এ উদ্যোগ বলে আমি মনে করি। মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আরেকজন সদস্য ও গাংনী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশাদুজ্জামান বাবলু জানান, ৩৬ জুলাই মহান বিপ্লবের পরে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার পেতাত্মারা দেশে রয়ে গেছে। বিদ্যুৎ বিলে এ ধরনের প্রচার দেখে আমরা গাংনী অফিসে যায়। গাংনী অফিসারের নজরে আনার পর তারা মুছে দিয়ে এখন প্রিন্ট দিচ্ছে। জিএম সাহেব এগুলো ত্যাগ না করলে সারাদেশে যে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন হচ্ছে। বর্তমান জিএম সেই ফ্যাসিবাদ বিরোধীদের আন্দোলনের মুখে পরবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আর এগুলো বাদ না দিলে যেকোন সময়ে অঘটন ঘটতে পারে এবং কোন কিছু ঘটলে রাজনৈতিকভাবে আমাদের দায় থাকবে না। মেহেরপুর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোনের অন্যতম নেতা নাহিদুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ৫ আগস্টে স্বৈরাচার শাসনের পতন হয়। কিন্তু বিভিন্ন দপ্তরে তার পেতাত্মারা রয়ে গেছে। আমলা থেকে শুরু বিভিন্ন জায়গায় তারা আছে, মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিলের কপিতে শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সেøাগান অনেক জায়গায় পরিবর্তন হলেও মেহেরপুরে করা হয়নি। মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে একাধিকবার জানানোর পরেও তারা ব্যবস্থা নেইনি। এমনকি সাংবাদিকরা বলার পরেও ব্যবস্থা নেইনি। মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারিকে জানানো হয়। কিন্তু তাদের কথাও আমলেও নেইনি বর্তমান জিএম। এ ঘটনায় আমরা মেহেরপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানায় এবং এ বিষয়ে আমরা বৈঠক করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব এবং অবশ্যই আমরা এ কর্মকর্তার দ্রুত অপসারণ চাইব। মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার স্বদেশ কুমার ঘোষ জানান, আগে থেকে যেহেতু ছাপানো ছিল তাই অর্থ অপচয় রোধে আমরা এটা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এরপর থেকে আমরা এগুলো মুছে দেব। ইতোমধ্যে আমাদের নিকট বিভিন্ন মানুষ এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করায় আমরা আর এই সেøাগান রাখবো না।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More