স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল আরও ১৯ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে মাদারীপুরে চারজন, গোপালগঞ্জে একজন, মৌলভীবাজারের দুজন, গাজীপুরে একজন, নওগাঁয় একজন, বরিশালে তিনজন, ময়মনসিংহে দুজন, খুলনায় পাঁচজন মারা গেছেন। তাদের অনেকেই হাসপাতালে যাওয়ার আগে বাড়িতে মারা যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করাও হচ্ছে। অনেককেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী-মাদারীপুরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে। বাকি দুজনের মৃত্যু হয়েছে বাড়িতে। মাদারীপুর সদর উপজেলার পৌরসভার থানতলী এলাকার বাসিন্দা আজাদ খান (৫৮) কয়েক দিন ধরে জ্বর ও ঠান্ডা-কাশিতে ভুগছিলেন। তিনি নিজ বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে তিনি মারা যান। পরে সকাল ৯টার দিকে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছেন। প্রায় একই সময়ে শহরের হরিকুমারিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. রকিবউদ্দিন (৬৫) নিজ বাড়িতে মারা যান। পরে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করেন। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে আলমগীর বেপারী (৫০) নামে এক ব্যক্তি মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে মারা যান। তিনি সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের বাসিন্দা। ৪ দিন ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন আলমগীর। এছাড়া সদর উপজেলার দুর্গাবর্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আনিচুর রহমান (৪৮) এক সপ্তাহ ধরে জ্বর-কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। পাঁচ দিন আগে চিকিৎসার জন্য তিনি মাদারীপুর সদর হাসপাতালে এসেছিলেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ফরিদপুর থেকেই তিনি করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। তবে পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার আগেই সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে তিনি মারা যান। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আশরাফুজ্জামান বাবু (৪০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কাশিয়ানী উপজেলার পোনা গ্রামের নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে প্রতিবেশী দুই বৃদ্ধ মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে সিলেটে নেয়ার পথে একজনের এবং নিজ বাড়িতে অপরজনের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া দুজন হলেন ওয়াহিদ মিয়া (৬০) ও প্রতিবেশী আলতা মিয়া (৬২)। তাদের বাড়ি উপজেলার ভানুবিল গ্রামে। স্থানীয় লোকজন বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ভানুবিল গ্রামের ওয়াহিদ মিয়া। তার জ্বরের পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তাকে প্রথমে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে দ্রুত তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় সেখান থেকে ওয়াহিদ মিয়াকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিলো। পথে রাত ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে ৬৫ বছর বয়সী একজনের মৃত্যু হয়েছে। জ্বর, ঠান্ডা ও কাশিসহ অন্যান্য করোনা উপসর্গ নিয়ে বৃহস্পতিবাব বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে নওগাঁর মান্দা উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আনিসুর রহমানের (৫৪) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তিনি মারা যান। তিনি তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের ঘোনা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহী শহরের শিরোইল এলাকায় সপরিবারে বসবাস করে আসছিলেন।
বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ছয় ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে একজন নারী। গতকাল দুপুর ২টা ২০ মিনিটে একজন, ২টা ৫ মিনিটে একজন ও সকাল সাড়ে ৭টায় অন্যজনের মৃত্যু হয়। তাদের বয়স যথাক্রমে ৩৫, ৫৫ ও ৬৬ বছর। এর মধ্যে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে মারা যান সদর উপজেলার রায়পাশা এলাকার এক নারী (৩৫)। দুপুর ২টা ৫ মিনিটে মারা যান বানারীপাড়া উপজেলার বাইশালী এলাকার এক ব্যক্তি (৫৫)। সকাল সাড়ে ৭টায় মারা যান বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর এলাকার এক ব্যক্তি (৬৬)। জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ছিলেন তারা।
ময়মনসিংহে সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে দুজন মারা গেছেন। সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে নগরীর কালিবাড়ি এলাকার বৃদ্ধ জালাল উদ্দিন (৭৫) এস কে হাসপাতালে ভর্তি হলে সকাল ১১টার দিকে মারা যান। আর বৃহস্পতিবার রাতে ভালুকা উপজেলার জামিরদিয়া গ্রামের ইব্রাহিম খলিলকে কুর্মিটোলায় নেয়ার পথে মারা যান। তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা উপসর্গ নিয়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, জরিনা বেগম (৬০), মোহাম্মদ আলী (৬০), রুমা বেগম (৩৫), কার্তিক (৪০) ও জমশেদ আলম (৬০)। জানা গেছে, করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ১৬ জুন ভর্তি হন মহানগরীর খালিশপুর থানা এলাকার বাসিন্দা আবদুল গনির স্ত্রী জরিনা বেগম (৬০)। গতকাল সকাল ১০টার দিকে তিনি মারা যান। ১৭ জুন রাতে ভর্তি হন রূপসা উপজেলার খাজাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মৃত আরশাদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী (৬০)। গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে তিনি মারা যান। ১৮ জুন ভর্তি হন যশোরের অভয়নগর এলাকার বাসিন্দা বাবুল ফরাজীর স্ত্রী রুমা বেগম (৩৫)। গতকাল বেলা সোয়া ২টার দিকে তিনি মারা যান। একই ওয়ার্ডে গত ১৮ জুন ভর্তি হন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা মৃত নিতাই রায়ের ছেলে কার্তিক (৪০)। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। শুক্রবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে ভর্তি হন খুলনা মহানগরীর ৫ নম্বর ঘাট এলাকার বাসিন্দা মো. আহমেদ আলীর ছেলে জামশেদ আলী। তিনিও সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে মারা যান।
পূর্ববর্তী পোস্ট
ঠিকাদারের সাথে আতাত করে অতিরিক্ত বিল দিচ্ছেন এলজিইডি গাংনী প্রকৌশলী
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ