স্টাফ রিপোর্টার: স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ বছর ঈদে বাড়ি ফেরার ব্যাপারে বারবার নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা ছাড়তে সতর্ক করা হয়েছে রাজধানীবাসীকে। বাড়ি ফেরা ঠেকাতে পুলিশ মহাসড়ক ও ফেরিতে প্রতিরোধ তৈরি করেও বাড়িমুখো জনস্রোত ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে। মৃত্যুঝুঁকি উপেক্ষা করে নানা অজুহাতে গ্রামে যাচ্ছে ঢাকার মানুষ। অবশেষে পুলিশ হাল ছেড়ে দিয়ে রাজধানী থেকে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ব্যক্তিগত গাড়িতে বাড়ি ফেরার পথের বাধা সরিয়ে নিয়েছে। সেই সঙ্গে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর ছাড়ার ব্যাপারেও পুলিশ কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে। গতকাল পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এসব তথ্যের পাশাপাশি আরও জানাগেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বাড়ি যেতে পারবেন ঘরমুখো মানুষ। সেক্ষেত্রে তাদের কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হবে না। বৃহস্পতিবার সরকারের উচ্চমহল থেকে পুলিশকে এ ধরনের একটি মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ছুটিতে জরুরি কাজের জন্য কেউ যদি গ্রামের বাড়ি ফিরতে চায় তাহলে পুলিশ যেন তাদের অনুমতি দেয় এবং খুব বেশি হয়রানি না করে। খুব বেশি প্রশ্নোত্তরের শিকার না হতে হয় ঘরমুখো মানুষকে। তবে গণপরিবহন যাতে না চলে সে ব্যাপারে কঠোর হতে বলা হয়েছে পুলিশকে। এদিকে নির্দেশনাটি পাওয়ার পর হাইওয়ে পুলিশসহ, সব জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সরকারের উচ্চমহল থেকে মৌখিক এই নির্দেশনাটি প্রথমে পুলিশে আসে। নির্দেশনায় বলা হয়, যারা কষ্ট করে বাড়ি ফিরছেন তাদের যেন বাড়ি ফিরতে দেয়া হয়। তবে তারা গণপরিবহনে বাড়ি ফিরতে পারবেন না। জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, ব্যক্তিগত গাড়িতে লোকজন বাড়ি ফিরতে পারবে। তবে বন্ধ থাকবে গণপরিবহন। ঘুরমুখো মানুষদের বাধা না দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্যদের বলা হয়েছে। গত ২১ মে রাত থেকেই রাজধানীতে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো চেকপোস্টগুলো সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দেখভাল করতে পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় থাকবেন। তবে কেউ যেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি না ফিরেন তা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগে গত ১৭ মে থেকে ঢাকায় প্রবেশ ও ঢাকা থেকে বাহিরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলো ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। নানা চেষ্টার পরও ঘরে ফেরা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে অনেকটাই ব্যর্থ হয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গণপরিবহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার লোকজনের চলাচলের অন্যতম পথ হচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট। ফলে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ঈদে ঘরমুখো যাত্রী এবং ছোট গাড়ির চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। গত কয়েকদিনে দফায় দফায় বন্ধ ছিলো ফেরি। এতে ঘাট এলাকায় যাত্রী বা যানবাহনের চাপ ছিলো অনেকটাই কম। গতকাল রাস্তায় বাধা না থাকায় সকাল থেকেই লোকজন বিভিন্ন যানবাহনে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে আসেন। যানবাহনের সঙ্গে সাধারণ লোকজনও ফেরিতে পার হয়ে যাচ্ছেন। বিআইডব্লিওটিসির ভারপ্রাপ্ত ডিজিএম জিল্লুর রহমান জানান, বাধা তুলে নেয়ায় ঘাটে ছোট গাড়ি ও লোকজনের চাপ বেড়ে গেছে। তবে যানবাহন ও যাত্রীদের নির্বিঘেœ পার করা হচ্ছে। ফেরির কোনো সমস্যা নেই। যানবাহন ও যাত্রীদের চাপ আরও বেশি হলেও কোনো সমস্যা হবে না।
রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি উপেক্ষা করে ঈদে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েকদিন ফেরিতে যাত্রী পারাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বৃহস্পতিবার রাত থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১১টি ফেরি চলাচল শুরু করায় গতকাল ভোর থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। দুপুরের পর প্রতি ফেরিতে পাঁচ শতাধিক যাত্রী পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আসে। তবে দৌলতদিয়া প্রান্তে কোনো গণপরিবহন না থাকায় যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বিভিন্ন স্থানে যেতে হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া দিলেও অনেক সময় মিলছে যা যানবাহন। রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক ঈদে যাত্রীদের বাড়ি ফেরা বন্ধ করতে পুলিশের যে কড়াকড়ি ছিলো সেটি এখন আর নেই। মানুষের বাড়ি আসার ক্ষেত্রে পুলিশ সহায়তা করবে বলে জানান রাজবাড়ী জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ