স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলে ১৮ জন মারা গেছেন। এরমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিনজন, গাজীপুরে একজন, দিনাজপুরে একজন, চাঁদপুরে দুইজন, নরসিংদীতে একজন, মাদারীপুরে একজন ও চট্টগ্রামে দুইজন মারা গেছেন। তাদের অনেকের করোনা পরীক্ষা করা হলেও ফলাফল পাওয়ার আগেই তারা মারা যান। মৃত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করাও হচ্ছে। অনেকই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেলে ৭ মত্যু : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মঙ্গলবার বিকাল থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, আমেনা বেগম (৫৭), রায়হান (৬৫), রানী (২৮), জাহানারা (৫০), ধনু মিয়া (৭৭), আবুল খায়ের (৬৫), দীপ্ত মিয়া (৭৩)।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী- ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনজন মারা গেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে করোনা ভাইরাস উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন হাফেজ মো. মুছা মিয়া (৬০)। তিনি বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড মসজিদের সাবেক ইমাম ছিলেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় তিনি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার স্বজনরা জানান, মুছা মিয়া কয়েকদিন যাবৎ জ্বর ও সর্দিতে ভুগছিলেন। গত সোমবার তিনি নিজেই সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসেন। পরদিন মঙ্গলবার বিকেলে তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তিনি জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। সন্ধ্যার পর তার পাতলা পায়খানা শুরু হয় এবং রাত ১০টার দিকে তিনি হাসপাতালেই মারা যান।
এছাড়া নাসিরনগরে করোনায় ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে (৩৫) নামে এক স্বাস্থ্য পরিদর্শকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় তার নিজ বাড়িতে শ্বাসকষ্ট ও কাশি থাকায় আশংকাজন অবস্থায় নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স নেয়া হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ব্যক্তি ফান্দাউক ইউনিয়নের আতুকুড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ফান্দাউক ইউনিয়নে স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া নবীনগরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে নবীনগর পৌর এলাকার মাঝিকাড়া গ্রামে নিজ বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার নাম তাহসিন আক্তার জনি (৩২)। তিনি নবীনগর পৌর এলাকার মাঝিকাড়া গ্রামের পরিবহন শ্রমিক জসিম উদ্দিনের মেয়ে। সিলেটে কৃষি বিপণন অধিদফতর অফিসে কর্মরত ছিলেন এই তরুণী।
গাজীপুরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে গাজীপুরের কভিড ডেডিকেটেড শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমান জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে এই হাসপাতালে আইসোলেশন এ থাকা ৭১ বয়স বয়সী এক ব্যক্তির করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে। তিনি করোনার উপসর্গ জ্বর, ঠান্ডা, কাশি-শ্বাসকষ্ট ছাড়াও ডায়াবেটিক, প্রেসার ও হার্টের সমস্যা নিয়ে ৮ জুন সকালে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। দিনাজপুরের হাকিমপুরে নমুনা দেয়ার ৯ দিন পর করোনা উপসর্গ নিয়ে সাহেব আলী (৬০) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ঢাকার নারায়নগঞ্জে চাকরি করতেন। গতকাল বুধবার সকালে হাকিমপুর উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের জাংগই গ্রামের নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় সাহেব আলী মারা যান। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় কভিড-১৯ এর উপসর্গ নিয়ে এক যুবকের (৩৮) মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ওই রাতেই তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। জানা যায়, ওই যুবক এক সপ্তাহ আগে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হন। তিনি প্রাইভেট চিকিৎসকের পরামর্শে ঘরে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নে এক ব্যবসায়ী (৫৫) মারা গেছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি মারা যান। এ নিয়ে দুই দিনে ওই ইউনিয়নে কভিড-১৯ এর উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু হলো। চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় করোনা উপসর্গে মারা গেছেন মেহের দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সফি আহমেদ মিন্টু। করোনা উপসর্গে মঙ্গলবার গভীর রাতে তিনি মারা যান। ইউপি মেম্বার আবু ইউসুফ জানান, চেয়ারম্যান সাহেবের জ্বর ছিলো। পরে বাড়িতে স্ট্রোক করার পর কুমিল্লা নেয়ার পথে তিনি মারা যান। শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. অচিন্ত্য কুমার চক্রবর্তী বলেন, চেয়ারম্যানের জ্বর-শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ থাকায় মঙ্গলবার তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রাতে তিনি মারা যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার বলেন, যারা দাফনকার্যে অংশ নিয়েছেন তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাই তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। এদিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১০নং গোবিন্দপুর ইউনিয়নের চরভাগড় গ্রামের নিজ বাড়িতে গতকাল সকালে হাফেজ আহম্মেদ (৫৪) মৃত্যুবরণ করেন। বিকেলে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি ফরিদগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও ৯২’ সালে ফরিদগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ভিপি প্রার্থী ছিলেন। ফরিদগঞ্জ আওয়ামী গুণীজন স্মৃতি সংসদের সহ-সভাপতি ছিলেন। নরসিংদীতে করোনার নমুনা দিতে এসে টুটুল মিয়া (২৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে নরসিংদী জেলা কভিড হাসপাতালে তিনি মারা যান। জানা গেছে, টুটুলের গত ৪ থেকে ৫ দিন ধরে জ্বর, ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্ট ছিলো। তিনি বাড়িতে চিকিৎসা নেয়ার পরও তার স্বাস্থ্যের উন্নতি না হওয়ায় করোনা টেস্টের সিদ্ধান্ত নেন। বুধবার সকালে মাকে নিয়ে হাসপাতালে করোনার নমুনা দিতে যান। হাসপাতালে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নরসিংদী জেলা কভিড হাসপাতলে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মিজানুর রহমান বলেন, টুটুলের নমুনা দিতে আসার পর শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে আমরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু ঢাকা নেয়ার আগেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মাদারীপুরের শিবচরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গেলেন উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুদ্দিন খান (৬৫)। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। তিনি শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উপজেলা ইউনিটের কমান্ডার ছিলেন। শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. সেলিম জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন খান দীর্ঘদিন থেকেই শ্বাসকষ্ট ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। তিনি মারা গেছেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট
করোনা সৃষ্টিসুখের উল্লাস কাড়লেও শুভেচ্ছায় উজ্জীবিত মাথাভাঙ্গা পরিবার
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ