প্রতারকচক্রের কৌশল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিনব হয়। অন্যকে ঠকাতে নতুনত্ব না থাকলে হবে কেনো! তবে কিছু প্রতারণার বর্ণনা যে পুরোন হয় না তাও নয়। যেমন, টাকা পড়ে গেছে বলে বিভ্রান্ত করে চোখের পলকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনার মধ্যে খুব একটা অভিনবত্ব নেই। এর আগেও ইসলামী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখার শিঁড়িসহ ভেতরে বাইরে টাকা ছিটিয়ে দিয়ে বা টাকার নোট ছোট বড় করে দেয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিগত দিনের প্রতারণার কিছু দৃশ্য দেয়ালে ঝুলোন ক্যামেরায় ধারণও হয়েছে। পুলিশের কাছে নালিশও গেছে। প্রতারক ধরা পড়েনি, প্রতিকার মেলেনি। মঙ্গলবার আনুমানিক ১১টার দিকে একজন পাট ক্রয়ের ফড়ের ফাঁকি দিয়ে নগদ ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছে সঙ্গবদ্ধ একদল প্রতারক। প্রতারকদের ছবি নিয়ে পুলিশ অভিযানে নেমেছে। পত্রিকার পাতায় এ খবর বেশ গুরুত্ব সহকারেই উঠে এসেছে। টাকা কি উদ্ধার হবে? ধরা পড়বে কি প্রতারক? এ প্রশ্নের জবাব ভবিষ্যতের গর্ভে থাকলেও এখন অবস্থা দৃষ্টে যা অনুমান করা যায় তা বড্ড হতাশার।
জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দেশে পুলিশের পদে পদে অপ্রতুলতা। এটা যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমনই আমাদের দেশের পুলিশ সকল প্রতিকূলতা কাটিয়েও যে বহু পারার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, এবং করে তা অস্বীকার করা অজ্ঞতা। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ বিগত দিনের তুলনায় এখন অনেক কর্মতৎপর। পেশা দারিত্বেরও নজির রয়েছে। ফলে প্রতারক চক্র ধরে প্রতারিতের টাকা উদ্ধারের প্রত্যাশা করাই যায়। প্রতারকচক্র আকাশ থেকে যেমন পড়ে না, তেমনই ওরা প্রতারণা করে মাঠি ফুড়েও লুকোয় না। এরপর যখন ওদের ছবি পাওয়া গেছে তখন যতো মানুষের মাঝেই হারাক, খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয়। সম্ভব তখনই হবে যখন পুলিশের কর্তব্যরত কর্তা তার বিচক্ষণতার সাথে কর্তব্যপরায়ন হবেন। ঘরে আগুন জ্বলে রে, কেবা এখন ওঠেরে বলে গড্ডালিকায় গা ভাসালে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে বাধ্য। বিগত দিনে প্রতারণা করা প্রতারকদের ধরে আইনে সোপর্দ করতে পারলে অবশ্যই এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পেতো। আর সকলে যদি সচেতন হতো তা হলে তো দৃশ্যপটই পাল্টে যেতো। যখন থেকেই হোক, যেভাবেই হোক আমাদের সমাজ দিন দিন দায় এড়ানোর সমাজে রূপান্তর হয়েছে। একের সমস্যা দেখে অন্যের উদাসিনতা যে তাকেও সমস্যার মধ্যে ফেলবে তা উপলব্ধি বোধ উবে গেছে। যাবেই না বা কেনো? অপরাধীরা হাতে গোনা হলেও ওরা থাকে সঙ্গবদ্ধ। সমাজ ভালোমানুষে ভরা হলেও পুলিশ-ই ভালো মানুষগুলোর ভালো থাকার ভরসা।
প্রতারকদের মূল অস্ত্র লোভের টোপ। বিশ্বাস করার মত আচরণের মধ্যদিয়েই ওরা সাধারণ সরল সোজা মানুষগুলোকে বোকা বানায়। হাতিয়ে নেয় টাকা কড়ি মূল্যবান মালামাল। সমাজে কতরকমের প্রতারক ঘুরছে, কতরকমের প্রতারণা হচ্ছে তার ইয়েত্তা নেই। ফলে সকলকেই সব সময়ই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। চলার পথে যখন তখন আসতে পারে আচমকা বাঁক। হুমড়ি খেলেই সর্বনাশ। যেহেতু মাছি থকথকে ভিড়ের দেশ, ভিড়ের মধ্যে সব সময়ই ঘুর ঘুর করছে প্রতারক। ওরা সুযোগ খোঁজে, নিশ্বাস ছাড়ছে ঘাড়ের ওপর। শাদা চোখে বোঝা শক্ত। পুলিশের পক্ষেও ওদের সন্দেহ করা খুব সহজ নয়। তারপর পুলিশে রয়েছে অপ্রতুলতা। অবশ্য এই অপ্রতুলতা অনেকটাই কাটিয়ে তুলেছে, তুলছে বর্তমান সরকার। এরপরও অসতর্কতার কারণে সর্বনাশ ডেকে আনা যেমন কাম্য নয়, তেমনই কোন অজুহাতে পুলিশের দায় এড়ানোও দায়িত্বশীলতা নয়। অপরাধীকে ধরে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে না পারলে অপরাধ প্রবাণতা বাড়ে। পুলিশকে পড়তে হয় আস্থার সংকটে। সমাজ দোলে বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচালে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
চাচার ওপর রাগ করে নিজের পোষা খাসিকে কুপিয়ে ১৬ টুকরা করেছে ভাতিজা
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ