সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতার ভিত্তিতে পারস্পরিক স্বার্থ বজায় থাকবে এমনটি প্রত্যাশিত। কিন্তু একের পর এক সীমান্ত হত্যাসহ নানাবিধ অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে থাকলে তা স্বাভাবিকভাবেই সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্তরায়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশিরা হত্যার শিকার হচ্ছে। হতাহতদের একটি বড় অংশ হলো গবাদিপশু ব্যবসায়ী এবং সীমান্তবর্তী সাধারণ কৃষক। সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ তাদের আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে যাওয়া, হাটবাজারে বেচাকেনা করা এবং কাজ খোঁজার জন্য নিয়মিতভাবে সীমান্ত পারাপার করে। এছাড়াও সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি কৃষিজমিতে কৃষিকাজ কিংবা নদীতটে মৎস্য আহরণের জন্যও অনেক মানুষকে সীমান্তরেখা বরাবর যেতে হয়। অথচ বিএসএফ কারণে-অকারণে বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করে হত্যা করছে। এ ব্যাপারে পতাকা বৈঠক, কূটনীতিক পর্যায়ে আলোচনা, দ্বিপক্ষীয় আলোচনা অনেক হয়েছে। কিন্তু বিএসএফ কর্তৃক সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। বরং এ হত্যার মাত্রা বেড়েই চলেছে। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলনের গুরুত্ব অপরিসীম এবং এ সম্মেলন ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
প্রসঙ্গত, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে গত সোমবার শুরু হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) ৫৫তম সীমান্ত সম্মেলন। চার দিনের এই সম্মেলন আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি সমাপ্ত হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর দুই দেশের মধ্যে মহাপরিচালক পর্যায়ে এটাই হবে প্রথম সীমান্ত সম্মেলন। ফলে, এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য। এবারের সম্মেলনে মূলত আলোচনায় প্রাধান্য পাবে সীমান্ত হত্যা। সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো, আহত, আটক, অপহরণ রোধ; ভারত থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ দ্রব্যের চোরাচালান প্রতিরোধ; আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ অনুপ্রবেশ, বিশেষ করে ভারত সীমান্ত দিয়ে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধের মতো বিষয়ও গুরুত্ব পাবে।
আমরা বলতে চাই, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই সীমান্ত হত্যার ঘটনা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অবৈধ হত্যা বন্ধ করতে হবে। সীমান্ত হত্যা বাংলাদেশের জন্য কতটা উদ্বেগজনক তা প্রতিবেশী দেশ ভারতকে অনুধাবন করতে হবে। একইসঙ্গে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিকে সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে। সীমান্তে হত্যাকা-, নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন করে ভারতের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে অপ্রত্যাশিত ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া, বহু দেনদরবার, আলাপ-আলোচনা, সমঝোতা এবং প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সীমান্ত হত্যা যেমন বন্ধ হয়নি, তেমনি ঘটেছে নির্যাতনের ঘটনাও। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হত্যা বন্ধে নেয়া হয়েছে নানা ধরনের উদ্যোগ। মিলেছে আশ্বাসও। কিন্তু এরপরেও একের পর এক সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশিরা। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সর্বোপরি, এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সীমান্ত হত্যাসহ অন্যান্য আলোচনার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হোক। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে হত্যা কিংবা নির্যাতনের বিষয়টি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক। অপরাধ করলে আইন মোতাবেক শাস্তি হবে কিন্তু আইন বহির্ভূত নির্যাতন কিংবা হত্যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত হতে পারে না। দুই দেশের মধ্যে মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনের মধ্যদিয়ে সীমান্ত হত্যাসহ অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More