সামাজিক ভাতা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে

সম্পাদকীয়

সামাজিক ভাতা বর্তমান সরকারের একটি জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ। তবে সামাজিক ভাতাপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ বয়স্ক ও ৩৩ শতাংশ বিধবা অযোগ্য সুবিধাভোগী রয়েছে। যার মাধ্যমে অযোগ্য সুবিধাভোগীদের জন্য ব্যয় হয় প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা-যা প্রতিরোধে কার্যকরী পারিবারিক জরিপ করার দাবি করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সিপিডি মনে করে, ওই অপব্যয় রোধ করা গেলে শতকরা ৪৫ শতাংশ প্রকৃত যোগ্যদের ভাতার আওতায় আনা সম্ভব। একইসঙ্গে যোগ্য অ-সুবিধাভোগীদের ভাতার আওতায় আনতে বরাদ্দ বাড়ানোরও দাবি করেছে সংস্থাটি। রোববার রাজধানীর মহাখালীতে সিপিডি আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বয়স্ক ও বিধবা ভাতার ক্ষেত্রে মাসে ৫০০ টাকা ও শিক্ষা উপবৃত্তির জন্য মাসে ১৫০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সামাজিক ভাতাপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ বয়স্ক ও ৩৩ শতাংশ বিধবা, অযোগ্য ও সুবিধাভোগী রয়েছে। এদের মধ্যে আবার প্রায় ১২ শতাংশ পেনশন, ভিজিডি বা অন্যান্য ভাতা নিচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা অযোগ্য ও সুবিধাভোগীদের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে-যা প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। তাই প্রকৃত দুস্থ ও আর্থিক দিক দিয়ে দুর্বলদের চিহ্নিত করতে দারিদ্র্য প্রবণ এলাকায় একটি কার্যকরী পারিবারিক জরিপ করা উচিত।

বর্তমান সুবিধাভোগীর প্রয়োজন বিবেচনায় টাকার পরিমাণ যদি বাড়ানো যায়, অর্থাৎ ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা করা হয় তাহলে অতিরিক্ত ৩ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা প্রয়োজন। কর ফাঁকি ও কর অস্বচ্ছতার মাধ্যমে প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। সেটা যদি আদায় করা সম্ভব হয় তাহলে সেখান থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এ খাতে ব্যয় করা সম্ভব।

এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, বর্তমান সরকার দরিদ্রবান্ধব। এ দেশে যারা দরিদ্র ও দুস্থ তাদের জন্য বর্তমান সরকার নানামুখী প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আমরা মনে করি, এসব প্রকল্পের অর্থ যাতে যথাযথভাবে ব্যয় হয় এবং প্রকৃত গরিব যারা তারা পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই।

২০১০ সাল থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়লেও দারিদ্র্য বিমোচনের গতি কমছে। দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনতে সব দরিদ্র পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। সরকারের এই ধরনের নানামুখী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ অত্যন্ত ইতিবাচক। করোনাকালে সরকার দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছে। পরিবার সমাজ তথা রাষ্ট্র থেকে দারিদ্র্য দূর হোক এটাই আমরা চাই। দেশের মানুষ স্বাভাবিক ও স্বচ্ছন্দ জীবনযাপন করুক এটাও আমরা চাই। তবে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে না পারলে দারিদ্র্য পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নয়। এ কারণে আমাদের যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা সে অবস্থায় এখনো যেতে পারিনি। এসব বাধা দূর করতে পারলে দারিদ্র্য আশানুরূপ হ্রাস করা সম্ভব। সম্ভব পর্যায়ক্রমে মধ্যম আয়ের ও উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাও। সুতরাং, সব ধরনের অনিয়ম বৈষম্য দূর করে আমাদের সেভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More