আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিদেশি কূটনীতিকদের নানা তৎপরতা সত্ত্বেও রাজনৈতিক সংকট সমাধানের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং দেশের বড় দু’দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনড় অবস্থান সংকটকে ক্রমেই বাড়িয়ে তুলছে। নির্বাচনের ক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে, শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনা ততোই ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথ দখলে দু’দলকে ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে। কয়েক মাস ধরে দুদলই একই দিনে কর্মসূচি পালন করে আসছে। এতে একদিকে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে, অন্যদিকে জনমনে ভীতির সঞ্চার হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিলো বিএনপি। অন্যদিকে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ যৌথভাবে আয়োজনের শান্তি সমাবেশের কথা ছিলো। বিএনপি সমাবেশে পিছিয়ে শুক্রবার করার ঘোষণা দিলে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনও তাদের কর্মসূচি পিছিয়ে শুক্রবার করার ঘোষণা দিয়েছে। এদন দুপক্ষই বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন অবস্থায় রাজপথে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ, বিরাজ করছে উত্তেজনা। বিএনপির দাবি, সরকারের পদত্যাগে একদফা দাবি আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের শেষ ধাপে রয়েছে তারা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রশ্নই ওঠে না। এ নিয়ে সংলাপ নয়, বরং দাবি আদায়ে অলআউট প্রস্তুতি নিয়ে নেতাকর্মীরা রাজপথে আছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এক কর্মসূচিকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসাবে দেখছেন দলটির হাইকমান্ড ও নীতিনির্ধারকরা। মহাসমাবেশের পর হঠাৎ আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি পালটে যেতে পারে বলেও মনে করছেন তারা। দেয়া হতে পারে ঢাকাকেন্দ্রিক টানা কঠোর কর্মসূচি।
অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও রাজপথের দখল ছাড়ছে না। বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশকে সংসদ নির্বাচন ভ-ুলের পাঁয়তারা বলে মনে করছেন তারা। দলের নীতিনির্ধারকরা সে কথা মাথায় রেখেই একই দিনে তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের ব্যানারে পালটা কর্মসূচি দিয়েছে। বিএনপিকে প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চলছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি। যদিও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে এই বলে আশ্বস্ত করা হচ্ছে যে, রাজনৈতিক দল হিসাবে তারা সহাবস্থানে থেকে এদিন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে, তবে কেউ যদি সংঘাত ও অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টায় উসকানি দেয়, তাহলে জনগণের জানমাল রক্ষায় শান্তির জন্য তারা প্রটেকশন দেবে। এ অবস্থায় রাজপথে সহিংস পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন নগরবাসী। অতীতে বিভিন্ন কারণে এবং ক্ষমতার পালাবদলের প্রেক্ষাপটে দেশে সহিংস রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির নজির থাকায় এ আশঙ্কা অমূলক নয়। গণতান্ত্রিক দেশে কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলকেই জনগণের কথা মাথায় রেখে সহনশীলতার পরিচয় দিতে হয়। নগরজীবনের স্বাভাবিক কর্মকা- যাতে ব্যাহত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। শুক্রবার রাজধানীতে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীপক্ষের সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি যেন শান্তিপূর্ণ হয়, প্রথমত সেটা নিজ নিজ পক্ষকেই নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং জনদুর্ভোগ রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সচেষ্ট থাকবে-এটাই প্রত্যাশা।