সমন্বিত উদ্যোগ 

দেশের  বন্যাকবলিত মানুষের জন্য আয়োজিত গণত্রাণ কার্যক্রমে মানুষের ঢল নেমেছে। বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বসে নেই চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের শিক্ষার্থীরাও। তারাও নগদ অর্থসহ ত্রাণ সংগ্রণ করছেন। দেশের বন্যা পরিস্থিতিতে বুধবার গণত্রাণ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শুক্রবার বিকেলে ঢাবির টিএসসির প্রবেশপথে একের পর এক ট্রাক, বাইক, রিকশা, প্রাইভেটকার জড়ো হচ্ছে। এসব যানবাহনে যে যার সাধ্যমতো সাহায্য নিয়ে আসছেন। গাড়িগুলো থামার সঙ্গে সঙ্গেই নামানো হচ্ছে শুকনো খাবার, খেজুর, ওষুধ, খাবার পানিসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী। টিএসসির ফটকে বুথ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। সংগ্রহ করা সামগ্রী রক্ষণাবেক্ষণেও সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীরা। নগদ অর্থের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ২৩ আগস্ট যে পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী টিএসসিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাছে তুলে দিয়েছেন, তা বহন করতে ৫০টির মতো ট্রাক লেগেছে। বন্যার্ত মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য গতকাল রোববার ৪র্থ দিনের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে গণত্রাণ সংগ্রহ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা। টিএসসির পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল, বিভাগের শিক্ষার্থীরাও নিজেদের মতো করে ত্রাণ সংগ্রহ করছেন। শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তারা কয়েক দিন আগে সড়কে ট্রাফিক সামলেছেন। আবার এখন দেশের প্রয়োজনে ক্যাম্পাসে নিজ উদ্যোগে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য সাহায্য সংগ্রহ করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের উদ্যোগ বহুদিন লক্ষ্য করা যায়নি। টিএসসিতে ত্রাণ দিতে আসা কেউ কেউ বলেছেন, এ মুহূর্তে তারা মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে স্বস্তিবোধ করছেন। তারা আরও বলেছেন, এতোদিন ত্রাণ কার্যক্রমও নির্দিষ্ট দলের মানুষের নিয়ন্ত্রণে ছিলো। দলীয় নেতাকর্মীরা কোনোভাবেই ওই বলয়ে অন্যদের ঢুকতে দেয়নি। এখন সেই সমস্যা না থাকায় মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করা হচ্ছে। ত্রাণ সংগ্রহে ধর্মীয় উপাসনালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও প্রশংসনীয়। প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণকাজে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। সারা দেশে এসব কাজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরাও দায়িত্ব পালন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন।
১৯৮৮ বা ৯৮ সালের বন্যার সময় ঢাবির টিএসসি ত্রাণের যেরকম একটা কেন্দ্র হয়ে উঠেছিলো, তেমন কার্যক্রম অনেকদিন ধরেই ছিলো অনুপস্থিত। বস্তুত বন্যায় প্রতিবছর দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ত্রাণ কার্যক্রমে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিলো সীমিত। এর অন্যতম কারণ ছিলো ত্রাণ সংগ্রহকারীদের ওপর মানুষের আস্থার সংকট। এবার সেই সংকট দূর হয়েছে। কয়েক দিন আগেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সারাদেশের শিক্ষার্থীরা তাদের যে সাহস, সক্ষমতা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তাতে দেশবাসী মুগ্ধ হয়েছেন। এসব কারণেই দেশের মানুষ শিক্ষার্থীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ত্রাণ কার্যক্রমেও অংশ নিয়েছেন। প্রতিবছরই আমাদের নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়। যে কোনো বড় সংকটে দল-মত নির্বিশেষ সবাই এগিয়ে এলে তা মোকাবেলা করা সহজ হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More