একটা ঈদে আপন ঠিকানায় না ফিরলেই কি হতো না? যারা ফিরেছেন তাদের অনেকেই ছড়িয়েছে নোভেল করোনা ভাইরাস। এ চিত্র যেমন চুয়াডাঙ্গার তেমনই মেহেরপুরেও। অন্যান্য অঞ্চলের চিত্রও অনেকটা অভিন্ন। প্রথম দিকে বিদেশ থেকে বিশেষ করে ইটালি ফেরতদের মাধ্যমেই বেশি ছড়িয়েছে ওই ছোঁয়াছে রোগ। তারপর ঢাকা গাজীপুর নারায়নগঞ্জ ফেরতদের মাধ্যমে পেয়েছে ব্যপকতা। অথচ সরবারের তরফে এবং সচেতন মহল থেকে বার বারই বলা হচ্ছিলো, যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এলে সব কিছুই আবার আগের মতোই হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! কোভিড-১৯ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
ঈদে বা রোজার মধ্যে কর্মস্থল শহর ছেড়ে আপন ঠিকানায় ফেরার হুড়োহুড়ি দেখে সভ্যদেশের বাসিন্দা বলা চলে না। বিশেষ করে ফেরিতে যেমন হুড়োহুড়ি দেখা গেছে তা দায়িত্বশীলদের হতবাক করেছে। এ পরিস্থিতিতেই কি শেষ? হুট করে বলা হলো, ব্যক্তিগত গাড়িতে ঈদে বাড়ি ফেরা যাবে। সুযোগটা নিলো অন্যরাও। ছোটগাড়ি কয়েকজন মিলে ভাড়ায় নিয়ে তা দিব্যি ব্যক্তিগত গাড়ির মতো ব্যবহার করে বাড়ি ফিরলো। এদের অনেকেই যে করোনায় আক্রান্ত তা দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার গড়চাপাড়ার যে বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে ওই বাড়ির জামাতা ঢাকাফেরত। জীবননগরের ধোপাখালির এক যুবকের অবশ্য আবারও পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেও ঢাকা ফেরত। মেহেরপুর গাংনীতে সংক্রামের বর্ণনা বিশ্লেষনেও ওঠে আসছে সেই একই ছবি।
বার বার বলা হচ্ছে, নতুন মুকুটাকৃতির বিষ তথা নোভেল করোনা ভাইরাস ভয়ানক ছোঁয়াছে। উপসর্গ বুঝে ওঠার আগেই আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে ছড়াচ্ছে ভয়াবহ আকারে। ফলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি দূরে যে যেখানে আছেন সেখানেই তাদেরকে অবস্থান করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ অনুরোধ অনেকেরই কণপাত হয়নি, হলেও বিষয়টি তেমন গুরুত্বই দেননি। দিলে নিশ্চয় তিনি যেমন আক্রান্ত হতেন না, তেমনই তার পরিবারসহ প্রতিবেশীদেরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে রাস্তায় বের হতেন না। আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি যখন নিশ্চিত হচ্ছেন তখন তিনি ভুল স্বীকার করছেন। একজনের একটি ভুল সমাজের কতবড় ক্ষতির কারণ হতে পারে তা বুঝতে না পারা মানেই অসচেতনতা। সংকটময় মুহূর্তে অসচেতনদের কি সভ্য বলা চলে? বোকারাই বিপর্যয় ডেকে আনে।
করোনা যুদ্ধ জয়ের জন্য গোটা বিশ্ব বিজ্ঞানের দিকে তাকিয়ে। এখনও পর্যন্ত প্রতিষেদক যেমন আবিষ্কার হয়নি, তেমনই প্রতিরোধকও নয়। ভয়াবহ ছোঁয়াছে এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হলে সতর্কতার সাথে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য তাগিদ দেয়া হচ্ছে। বিধি মানতে বাধ্য করতে গিয়ে দায়িত্বশীলদেরও পড়তে হচ্ছে বেকায়দায়। চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যবিভাগের অনেকেরই আক্রান্ত হতে হচ্ছে মূলত ওই দায়িত্বজ্ঞানহীনদের কারণেই। সচেনতাদের পালাবার পথ নেই। বোকাদের বোকামির শিকার হয়ে সকলকেই গুণতে হচ্ছে অনিশ্চয়তার প্রহর। সমাজের বাস্তব এই অবস্থার মধ্যে আমরা সকলেই হাবুডুবু খাচ্ছি। প্রতিকার? ভাগ্যই ভরসা।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ