সংস্কারের সুযোগ হারানো যাবে না

অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছে। বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা এমনই যে, তারা ক্ষমতার মোহে না জড়িয়ে স্বল্পমেয়াদে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পন্ন করবেন। একটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত রাজনৈতিক দলের কাছে ক্ষমতা তুলে দিয়ে বিদায় নেবেন। কিন্তু বর্তমানে কোনো কেয়ারটেকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশ পরিচালনা করছে না; বরং দায়িত্বে আছে অন্তর্বর্তুুী সরকার। সংঘটিত একটি নজিরবিহীন ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের পর পুরো দেশবাসীর আকাক্সক্ষার অনুকূলে দেশের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ সরকারের প্রধান করা হয়েছে। তিনি জাতির উদ্দেশে তার ভাষণে প্রথমেই বলেছিলেন, এ সরকার ততোদিনই ক্ষমতায় থাকবে যতোক্ষণ জনগণ চাইবে। তিনি পতিত স্বৈরাচারের ধ্বংস করে যাওয়া দেশ সংস্কারের একটি অভূতপূর্ব সুযোগ জাতির সামনে এসেছে বলেও মন্তব্য করেন। দেশের মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। তারপরও সরকার যে নির্বাচন করে ফেলার ইচ্ছার কথা জানিয়ে দিয়েছে সেটি তাদের সদিচ্ছারই প্রতিফলন।
এদিকে, স্বৈরাচার হটানোর আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্ররা ঘোষণা করেছে, খুনি, লুটেরা শেখ হাসিনার বিচার ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করার পরই নির্বাচন হতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রক্ষমতার প্রকৃত অংশীজন হলো রাজনৈতিক দল। কিছু দল পরিপূর্ণ সংস্কারের জন্য অপেক্ষা করতে প্রস্তুত নয়। তারা মোটামুটি কিছু সংস্কার করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে। সন্দেহ নেই, তাদের চাওয়ার পেছনে যৌক্তিক কারণ আছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এরই মধ্যে নানা গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের অনেক উপদেষ্টার কর্মকা- বিতর্কের সৃষ্টি করছে এবং তাদের সদিচ্ছা নিয়ে সংশয়ও দেখা দিচ্ছে। এমনকি এক-এগারোর সরকারের সময়ের মাইনাস টু’র আদলে কিছু করার চেষ্টা চলছে- এমন রটনাও ছড়িয়েছে। কিন্তু গুজব রটনা বা গুঞ্জনের ওপর ভিত্তি করে কোনো রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত নেয়া অনুচিত। এতে বরং দলটির দেশ পরিচালনার সামর্থ্য প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
আমরা মনে করি, একটি জাতির জীবনে বৈপ্লবিক সংস্কারের সুযোগ সচরাচর আসে না। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার মধ্যদিয়ে একবার এসেছিল। তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার সে সম্ভাবনা ধুলায় মিশিয়ে দেয়। ২০২৪ সালে আবারো সেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের উৎখাতের মাধ্যমে ৫৩ বছর পর নতুন আরেকটি সুযোগ জাতির সামনে হাজির হয়েছে। এই সুযোগ যথাযথভাবে কাজে লাগানোর সম্ভাবনা উজ্জ্বলতর এ কারণে যে, দায়িত্বটা সম্পন্ন করার জন্য আমরা একজন যোগ্যতর ব্যক্তি ড. ইউনূসকে পেয়েছি। তিনি বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করে সংস্কারের সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্ব দিয়েছেন। কমিশন কাজ করছে।
শুরুতেই সে প্রক্রিয়া থেমে গেলে, রাষ্ট্র সংস্কারের ঐতিহাসিক সুযোগ হাতছাড়া হবে। সেটি হবে দেশ ও জাতির জন্য আত্মঘাতী। নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অংশীজনদের সাথে সংলাপ করবেন। সেখানে বিষয়টির ইতিবাচক সুরাহা হবে- এটিই প্রত্যাশিত।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More