শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত হোক

সম্পাদকীয়

ূআজ মহান মে দিবস। পৃথিবীর ইতিহাসে এই দিনটি উজ্জ্বল হয়ে আছে। শ্রমিকের মর্যাদা রক্ষা ও ন্যায্য পাওনা আদায় তথা অধিকার আদায়ের দিন আজ। শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম আর সংহতির দিন। ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। কেননা সে সময় তাদের নির্দিষ্ট কোনো কর্মঘণ্টা ছিলো না। নামমাত্র মজুরিতে মালিকদের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করতে বাধ্য হতেন। আট ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে সেদিন শ্রমিকরা জীবন দিয়েছিলেন। আর শ্রমিক সমাবেশে সেদিন পুলিশ গুলি চালিয়ে আন্দোলন স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। এর প্রতিবাদে ৪ মে হাজার হাজার শ্রমিক ফেটে পড়েছিলেন বিক্ষোভে। সেদিনও পুলিশের গুলিতে শ্রমিককে জীবন দিতে হয়েছিলো। আন্দোলন গড়ে তোলার অপরাধে কয়েকজন শ্রমিককে মৃত্যুদ-ও দেয়া হয়েছিলো। এভাবে প্রাণের বিনিময়ে শ্রমিক শ্রেণি কায়েম করেছিল দৈনিক ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার। এরপর ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক ঐক্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

যুগে যুগে দেশে দেশে সমাজে খেটে খাওয়া শ্রমিক শ্রেণি ও মেহনতি মানুষ দেশ-জাতির উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রেখেছে, অথচ অবলীলায় তাদের জীবন চলে গেছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি। শ্রমিক নির্যাতন ও শোষণের ওপর গড়ে উঠেছে পুঁজির পাহাড়। অথচ এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, যে কোনো দেশের উৎপাদন অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে শ্রমিকরাই বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। আবার শোষণ-বঞ্চনা ও নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে শ্রমিকরাই। আমরা বলতে চাই, শ্রমিকদের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য বিষয়। নিশ্চিত করতে হবে শ্রমিকের মর্যাদা। কেননা শ্রমিক শ্রেণি সামাজিকভাবে মর্যাদা অর্জন করতে পারেনি এখনো। প্রসঙ্গত বলা দরকার, বাংলাদেশে শ্রমিক শ্রেণির অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত, তবু পরিতাপের বিষয় হলো-অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না।

যুগে যুগে সবচেয়ে নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছে অসহায় গরিব শ্রমিক শ্রেণি। নির্যাতিত, লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষ তাদের অধিকার রক্ষা ও দাবি আদায়ের জন্য সংগ্রামও করেছে বছরের পর বছর। তারা সংগ্রাম করে চলেছে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে, নিজেদের দাবি আদায়ের নিমিত্তে। যে কোনো পেশাজীবী মানুষের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ে কোনো রক্তপাত যে বৃথা যায় না, ইতিহাসে তার অনেক প্রমাণও রয়েছে। শ্রমের মর্যাদা রক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে এ পর্যন্ত রক্ত দিয়েছে পৃথিবীর লাখ লাখ মানুষ। নিজেদের জীবন দিয়ে তারা তাদের দাবি আদায় করেছে। তবুও শোষকদের কাছে তারা মাথানত করেনি। এখনো দেশে দেশে শ্রমিক শোষণ চলছে। বাংলাদেশেও শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ। আগুনে পুড়ে, ভবন ধসে অবলীলায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

এ কথা মনে রাখতে হবে, শ্রমিকদের কারণেই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শ্রমিকদের অবদান তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা এবং ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More