২০২৪ সালে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় বেড়েছে, এটা নিশ্চয়ই আনন্দের কথা। বিশেষ করে তীব্র ডলার সংকটের সময়। ফেলে আসা বছরটিতে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার। এর আগে ২০২১ সালে সর্বোচ্চ ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিলো। কিন্তু এর সঙ্গে বিদেশে কর্মী পাঠানোর পরিসংখ্যান মেলালে হতাশ হতে হয় বৈকি।
একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিদেশে শ্রমিক পাঠানো কমার কারণ বড় আকারের তিনটি শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়া। বাজার তিনটি হলো মালয়েশিয়া, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। বর্তমানে সৌদি আরবে শ্রমিক পাঠানোর সংখ্যা বাড়তির দিকে। বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০২১ সালে বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন ৬ লাখ ১৭ হাজার কর্মী। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ লাখের বেশি। ২০২৩ সালে তা আরও ২ লাখ বেড়ে কর্মী সংখ্যা ১৩ লাখ ছাড়িয়ে যায়। যদিও গত বছর তা ৩ লাখ কমে দাঁড়ায় ১০ লাখে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ কর্মী গেছেন মাত্র ৫টি দেশে। এগুলো হচ্ছে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
মালয়েশিয়ায় ২০২৩ সালে কাজ নিয়ে যান সাড়ে তিন লাখের বেশি কর্মী। কিন্তু গত জুন থেকে দেশটির শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে। গত বছর দেশটিতে সব মিলে কর্মী যেতে পেরেছেন এক লাখের কম। ওমানে ২০২৩ সালে কর্মী গিয়েছিলেন সোয়া লাখের বেশি। গত বছর সেখানে শ্রমবাজার বন্ধ থাকায় কর্মী গেছেন মাত্র ৩৫৮ জন। আমিরাতে ২০২৩ সালে কর্মী গিয়েছিলেন প্রায় এক লাখ। গত বছর দেশটিতে কর্মী গেছেন ৪৭ হাজার।
বিদেশে জনশক্তি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কেলেঙ্কারির কারণে দীর্ঘদিন পর চালু হওয়া মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চলতি বছর ফের বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি সেখানে যাওয়ার জন্য যারা নিবন্ধিত হয়েছিলেন, তাদেরও সবাই যেতে পারেননি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় এলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাকে সমস্যাটি জানানো হয়। কিন্তু এরপর এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা নেই।
বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য যেসব দেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে, সেসব দেশ কিন্তু কর্মী নেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করেনি। জনশক্তি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম দুর্নীতির কারণেই সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে বাংলাদেশি কর্মীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। তবে চক্র গঠনের অভিযোগে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সব দেশের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রবাসী আয় বাড়ার অর্থ এই নয় যে ভবিষ্যতেও এটা অব্যাহত থাকবে। প্রতিবছরই আগে পাঠানো শ্রমিকদের একাংশ দেশে ফিরে আসেন। তাদের শূন্যস্থান পূরণ না হলে প্রবাসী আয়ও কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তিনটি বড় দেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সৌদি আরবই একমাত্র ভরসা। ২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ায় সৌদি আরবে অবকাঠামো নির্মাণ শ্রমিকের চাহিদা বাড়বে আশা করা যায়। এ সুযোগ কাজে লাগানোর পাশাপাশি ওমান, মালয়েশিয়া ও আরব আমিরাতের বাজার পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাতে হবে। এ ক্ষেত্রে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টার বিকল্প নেই। রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী যথার্থই বলেছেন, এককেন্দ্রিক বাজারনির্ভরতা থেকে বের হতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে শ্রমবাজার বহুমুখী করার আওয়াজ দেয়া হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। নতুন বাজার খোঁজার তেমন উদ্যোগও লক্ষ করা যাচ্ছে না। যাদের কারণে শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর মাধ্যমে হারানো শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার করতে হবে। আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থা নিতে কার্পণ্য করবে না।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.