শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন

সম্পাদকীয়

ঋতু পরিক্রমায় ধীরে ধীরে শীতের আগমন ঘটছে। এই শীত নিয়ে আসে কিছু মানুষের জন্য শান্তিময় আগমনী বার্তা। তাদের মধ্যে দেখা যায় শীতের নানা প্রকার কাপড় পরার আমেজ। বিশেষ করে উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তদের তেমন কোনো সমস্যা নেই। তারা মূলত শীতকে উদযাপন করে থাকে। কিন্তু নিম্নবিত্ত এবং সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য এই শীত নিয়ে আসে এক ভয়াবহ দুর্ভোগ। তারা প্রয়োজনীয় শীতের কাপড় না থাকার করণে শীতে প্রচ- রকমের কষ্ট করে। বিশেষ করে গৃহহীন মানুষ, পথশিশুদের কষ্টের কোনো শেষ থাকে না এই শীতকালে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য চেষ্টা করা। তাহলে হয়তো এই শীতার্ত মানুষের কষ্ট কিছুটা কমে আসবে। ষড়ঋতুর এই দেশে এখন আর ষড়ঋতু নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীত, গরম ও বর্ষা-এ তিন ঋতুরই প্রভাব। প্রচ- গরম, অতিমাত্রায় শীত ও অতিবৃষ্টির প্রভাব বেশি। ষড়ঋতুতে বাংলা পৌষ ও মাঘ শীতকাল হলেও কোনো কোনো বছর কার্তিকের শেষদিক থেকে শীত শুরু হয় এবং তা থাকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এর মাত্রা নিচে নেমে আসে। তাপমাত্রা যখন কমতে থাকে, তখনই শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এ শীত অনেক সময় হাড় কাঁপানো শীতে পরিণত হয়। এ বছর শীত অনেক আগে এসেছে। কার্তিক মাসের শেষদিকে ও অগ্রহায়ণ মাসের শুরুর দিকে তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। সারা দেশে এখন হাড় কাঁপানো শীত। এই শীতে শিশু ও বৃদ্ধরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য শীতকাল বড় কষ্টের। শীতকাল এলেই দরিদ্র অসহায় মানুষ শীতে জবুথবু হয়ে যায়। গ্রীষ্মকালের পর যেমন শীতকাল আসে তেমনিভাবে সুখের পর দুঃখ। আর সুখ-দুঃখকে নিয়েই আমাদের জীবনযাপন করতে হয়। একইভাবে শীতকাল এসেছে ধনীদের জন্য সুখ, আনন্দ ও উল্লাস নিয়ে এবং গরিবদের জন্য দুঃখ, হতাশা ও অশান্তি নিয়ে। একদিকে শীতকাল এলে বিত্তবান শ্রেণির মানুষ খুশিতে আনন্দিত হয়। অন্যদিকে শীতকাল এলে গরিব, দুর্ভাগা, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দুঃখ হয়। আমাদের সমাজে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য শীতকাল হলো এক ধরনের অভিশাপ। আমরা জানি, সুবিধাবঞ্চিত মানুষ গ্রীষ্মকালে বা গরমের দিনে ফুটপাথ, রেলস্টেশন ও বস্তিতে থাকতে পারে। কিন্তু শীতকালে তাদের জন্য ফুটপাথ কিংবা রেলস্টেশনে থাকা খুবই কষ্টকর বা অসহনীয়। তা ছাড়া শীতে তাদের মাঝেমধ্যে না খেয়েও থাকতে হয়। শৈত্যপ্রবাহের রুষ্টতা থেকে রক্ষা পাওয়ার ন্যূনতম ব্যবস্থাপনাও তাদের থাকে না। ফলে অসহায় ও হতদরিদ্রদের কষ্ট কেবল বেড়েই যায়। বৃদ্ধ, শিশু ও ফুটপাথের গরিব মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে মারাও যায়। গত কয়েক দিন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে শীতের তীব্রতা অনেক বেড়েছে। বর্তমান শৈত্যপ্রবাহ আর ঠা-া দেশের উত্তরাঞ্চলের নিম্নআয়ের জনগণ অত্যন্ত কষ্টে দিনাতিপাত করছে, সেই সঙ্গে ডায়রিয়া, জ্বর, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ ঠা-াজনিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। শীতের সময় করোনাভাইরাসের আরেক দফা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। এ জন্য নানা প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। তবে শীতকালে দেশের কোথাও শীত বেশি কম হতেই পারে। এতে কারও হাত নেই, এটি প্রাকৃতিক। তবে এ ক্ষেত্রে শীতার্তদের জন্য আমাদের অনেক কিছুই করণীয় আছে। সরকারের পাশাপাশি আমরাও পারি শীতার্তদের জন্য আমাদের সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে। শীতের সময় শহরাঞ্চলের মানুষের তুলনায় গ্রামের সাধারণ মানুষ বেশি অসহায় হয়ে পড়ে। তারা যেখানে দুবেলা দুমুঠো খাবার কিনতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যায়, সেখানে শীতের বস্ত্র কেনা অসম্ভব এক রকম। গ্রামের এসব মানুষের অনেকের পক্ষে আলাদাভাবে শীতের কাপড় কেনা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। প্রতিবছর শীতের সময় দেশের বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা এমনকি ব্যক্তিপর্যায়ে শীতার্ত মানুষের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। অতীতে সরকারি পর্যায়েও গরিব মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এবার সে ধরনের কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না।

অন্যদিকে দেশে করোনার পরিস্থিতি এবং ব্যবসায়-বাণিজ্যে মন্দাভাবের কারণে এক ধরনের জ্বরাগ্রস্ত সময় বিরাজ করছে। এর প্রভাব সামাজিক কর্মকা-ের ওপরও পড়ছে। কিন্তু সমাজের বিত্তবান ও মানবিক বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা যদি দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে না দাঁড়ায়, তা হলে মানুষের দুর্ভোগ শুধু বাড়বেই। এ ক্ষেত্রে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তিপর্যায়ের উদ্যোগের মাধ্যমে এমন পরিস্থিতি থেকে শীতার্তদের রক্ষা করা যায়। সমাজে যারা বিত্তবান ব্যক্তি, তারা চাইলেই ছিন্নমূল মানুষের এই হাড় কাঁপানো শীতের সময় একটু সাহায্য করতে পারেন। আপনাদের একটু সহযোগিতার মাধ্যমেই সমাজে বসবাসরত গরিব অসহায় মানুষের মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারেন। ছিন্নমূল মানুষ শুধু শীতের সময়ই কষ্ট পায় না, গরমের তাপদাহ ও বর্ষার অঝোর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে জীবননাশের পরিক্রমায় পরিণত হয়ে পড়ে। দেশের নিম্নাঞ্চলের মানুষ বর্ষাকালে আশ্রয়স্থল ও খাবার সংকটে পড়ে যায়। যদি আমরা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতি একটু মানবতা দেখাই এবং পাশে দাঁড়াই তা হলে আমরা তাদের অশান্তি একটু হলেও দূর করতে পারবো, পাশাপাশি তাদের মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম হবো। এই কনকনে শীতে ফুটপাথ, রেলস্টেশন ও বস্তিতে বসবাস করা মানুষ শান্তিতে নেই। আমাদের সবার উচিত সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া। সরকারের পাশাপাশি আমরা সবাই এগিয়ে এলে শীতার্তরা উপকৃত হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More