শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ে রোধ করতেই হবে

গত ১০ এপ্রিল শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গত বছরের চেয়ে প্রায় এক লাখ পরীক্ষার্থী কমে যাওয়া মোটেই স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এসএসসি পরীক্ষায় এবার পরীক্ষার্থী ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন; যা ২০২৪ সালের তুলনায় এবার প্রায় এক লাখ কম। গতবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী ছিলো ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। গতবারও তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৪৮ হাজার পরীক্ষার্থী কমেছিলো। কমার এই ধারা অশনিসংকেত বৈকি। আরও উদ্বেগের খবর হলো পরীক্ষার ফরম পূরণ করেও ২৭ হাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষার হলে অনুপস্থিত ছিলো; যারা ১০ বছর পড়াশোনা করে বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তারপরও তারা অনুপস্থিতি থেকেছে। দৈবদুর্বিপাকের কারণে কিছুসংখ্যক পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকতে পারে। তাই বলে ২৭ হাজার! নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করা সব শিক্ষার্থীই বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেবে, এমনটা কখনো হয় না। দুই বছরে দারিদ্র্য, বাল্যবিবাহ, অসুস্থতা অথবা টেস্ট পরীক্ষায় ভালো করতে না পারা অনেক পরীক্ষার্থীই শেষ পর্যন্ত বোর্ড পরীক্ষায় বসে না। তারা অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে পরে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে। বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি, পাবলিক পরীক্ষা মানে প্রশ্নপত্র ফাঁস, নকল ও অনিয়মের ছড়াছড়ি। অনেক কেন্দ্রে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিও তৈরি হতো। এবার এসএসসি পরীক্ষার ভালো দিক হলো এখন পর্যন্ত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কথা শোনা যায়নি। বাকি পরীক্ষাগুলোর বিষয়েও আশাকরি তারা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবেন। বাংলাদেশ আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও সম্পূর্ণ নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হলেও কোথাও কোথাও অঘটন ঘটেছে। কয়েকটি কেন্দ্রে অসাধু উপায় অবলম্বনের জন্য কিছু পরীক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয়েছে। দু একটি কেন্দ্রে পরীক্ষককে বের করে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। দিনাজপুরের একটি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ না থাকায় ও বারবার বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে পরীক্ষার্থীদের মোমবাতি জ্বালিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, তারা চার্জার লাইট ও মোমবাতির ব্যবস্থা করেছেন। পরীক্ষা গ্রহণে কোনো সমস্যা হয়নি। ভবিষ্যতে কোনো কেন্দ্রে যাতে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। প্রতিকূল পরিবেশে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি মানসিক চাপ তৈরি করে। শিক্ষাবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রধানত আর্থসামাজিক কারণে এসএসসি পরীক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। অভিভাবকেরা মেয়েশিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন এবং পরীক্ষার আগেই বিয়ে দেন। পারিবারিক দুর্যোগের কারণে ছেলে শিক্ষার্থীরা অনেক সময় কাজ করতে বাধ্য হয়। তাদের কাছে পড়াশোনার চেয়ে সংসার চালানোই জরুরি হয়ে পড়ে। এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা। এর সমাধান করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন এগিয়ে আসতে পারে। শিশুশ্রম রোধ করতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তৎপর হতে হবে। আর বাল্যবিবাহ রোধে মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নিলেই হবে না, সামাজিকভাবেও বাল্যবিয়ে রোধে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। প্রত্যেক মা-বাবাকেও বাল্যবয়সে মেয়ের বিয়ে দেয়ার পরিণাম সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। যেখানে দেশে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে, সেখানে এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রবণতা ভালো লক্ষণ নয়। যোগ্য ও দক্ষ নাগরিক গড়ে তুলতে শিক্ষার বিকল্প নেই। এর ব্যত্যয় হলে বর্ধিত জনসংখ্যা সম্পদ না হয়ে বোঝায় পরিণত হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More