সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে বই উৎসব পালিত হলো। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, মহামারি করোনার কারণে গত দুই বছর বই উৎসব হয়নি। তবে গতকাল বছরের শুরুর দিনেই আড়ম্বরপূর্ণভাবেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হাতে শোভা পেয়েছে নতুন বই- যা ইতিবাচক। উল্লেখ্য, প্রতি বছর পয়লা জানুয়ারি এই বই উৎসব পালিত হয়ে থাকে। এটা সরকারের বড় কৃতিত্ব। এইদিনে শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে বই পেয়ে থাকে। তথ্য মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের বই তুলে দেন তিনি। এছাড়া রোববার প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক উৎসব কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এবং মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক উৎসব গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। গাজীপুরে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও ঢাবির মাঠে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন উৎসবের উদ্বোধন করেন।
জানা গেছে, সারাদেশে সব মিলিয়ে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী নতুন বই পাবে। এবার প্রাথমিকে ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ২৪৫টি এবং মাধ্যমিকে ২৩ কোটি ৮৩ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৮টি বই ছাপানো হচ্ছে। এনসিটিবির সূত্রমতে, শনিবার বিকেল পর্যন্ত প্রাথমিকে ৭ কোটি ৫০ হাজারের কিছু বেশি বই ছাপা হয়েছে। তবে ছাপার পর আনুষঙ্গিক কাজ শেষে উপজেলা পর্যায়ে গেছে ৬ কোটি ৭৭ লাখের বেশি বই। অন্যদিকে, মাধ্যমিকে ১৯ কোটি ২২ লাখের বেশি বই ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে গেছে ১৭ কোটি ৭৯ লাখের বেশি বই। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় উৎসব হলেও বছরের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থী সব বই হাতে পাবে না বলেও জানা যায়। নানামুখী জটিলতায় এবার ছাপার কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী কয়েকটি করে বই পাবে। শনিবার বিকাল পর্যন্ত প্রাথমিকের প্রায় ২৭ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ১৯ শতাংশের মতো বই ছাপাই হয়নি। এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেছেন, শতভাগ বই দিতে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। আমরা বলতে চাই, বছরের শুরুতে নতুন বই প্রাপ্তির মধ্যদিয়ে দেশের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের আনন্দের ঝিলিক চোখে পড়ে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, নতুন বই হাতে পাওয়ার আনন্দই আলাদা। ২০১৭ সাল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ব্রেইল বই, পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের নিজ ভাষায় লেখা প্রাক-প্রাথমিকের বই ও শিক্ষা উপকরণ এবং শিক্ষকদের শিক্ষক নিদের্শিকাও বিতরণ শুরু হয়। মাঝখানে করোনার কারণে গত দুই বছর বই উৎসব হয়নি। তবে আবারও যখন বই উৎসব হলো, তখন বিষয়টি অত্যন্ত আশব্যঞ্জক বলেই প্রতীয়মান হয়। লক্ষণীয়, বই বিতরণ ঘিরে যে উৎসব তা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক বাড়তি মাত্রা যোগ করে। তবে এটাও সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে যে, বিনামূল্যের বই কালোবাজারে বিক্রির ঘটনা ঘটে- এমন বিষয়ও এর আগে আলোচনায় এসেছে। ফলে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজরদারি বাড়াতে হবে। এটা সত্য, দেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে সফলতা এসেছে আমাদের। দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে। শিক্ষা যে দারিদ্র্যমুক্তির একটি প্রধান দিক তাও প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশে। দেশের শিক্ষা খাতে এটি সরকারের একটি অন্যতম সাফল্য বলেই আমরা মনে করি। সর্বোপরি বলতে চাই, বিনামূল্যের বই বিতরণ শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আমাদের প্রত্যাশা, এই মহৎ উদ্যোগের পূর্ণাঙ্গ সফলতার জন্য শিক্ষার বিস্তার এবং শিক্ষার মান নিশ্চিত করার দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। দেশে শিক্ষা বিকাশে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের হাতে শিক্ষা উপকরণ পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা জরুরি। শিক্ষা হতে হবে যুগোপযোগী, আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত। এছাড়া নৈতিকতাবোধসম্পন্ন শিক্ষার্থী তৈরির দিকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।