করোনা মহামারির সময় দেশের শিক্ষা খাতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। অন্য যে কোনো খাতের ক্ষতি যত সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব, শিক্ষা খাতের ক্ষতি তত সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। জানা যায়, করোনা মহামারিতে প্রাথমিক স্তরের প্রায় ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর শিখন ঘাটতি হয়েছে। এ সময়ে ডিজিটাল মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হলেও এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপকৃত হয়েছে। বস্তুত আধুনিক উপকরণের অভাবেই তখন বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ডিজিটাল মাধ্যমের পাঠদানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেনি। এ সময়ে বিভাগের হিসেবে বরিশালের শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক ভালো শিখেছে। সবচেয়ে পিছিয়ে পড়েছে সিলেটের শিক্ষার্থীরা। করোনায় শিখন ঘাটতি এবং এর প্রতিকারসংক্রান্ত এক সরকারি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় গবেষণাটি চালায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শিক্ষার্থীদের এ শিখন ঘাটতি মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। গবেষণা প্রতিবেদনে শ্রেণিভিত্তিক শিখন ঘাটতির যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে দেখা যায়, প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে পিছিয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ বাংলা, গণিত ও ইংরেজির মতো মূল বিষয়ে বড় ধরনের ঘাটতি নিয়ে বেড়ে উঠছে। তারা বর্তমান ও আগের শ্রেণির শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবইয়ের ওপর চরম ও মধ্যম মাত্রার শিখন ঘাটতিতে ভুগছে। করোনাকালের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়ন করছে। এসব শিক্ষার্থীরও শিখন ঘাটতি মোকাবেলার পদক্ষেপ নিতে হবে। এ কার্যক্রমে কাক্সিক্ষত সুফল পেতে হলে শিক্ষকদেরও ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ প্রদানের পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শিক্ষার ভিত যাতে মজবুত হয় সেজন্য নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। তা না হলে পরবর্তীকালে তারা কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন করতে পারবে কিনা সন্দেহ। শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে শহরের শিক্ষার্থীরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা সেসব সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলক কম পাচ্ছে। এ বৈষম্য দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের দুর্গম এলাকার, বিশেষত চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। শিক্ষা খাতে পিছিয়ে থাকলে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা কঠিন হবে। শিক্ষায় কাক্সিক্ষত অগ্রগতি নিশ্চিত করতে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ