গত দুই বছরে করোনার কশাঘাতে বেশির ভাগ পরিবার এখন অর্থাভাবে সন্তানদের লেখাপড়া করাতে হিমশিম খাচ্ছে। করোনা-উত্তর বর্তমানে অর্থনৈতিক মন্দা ও নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় সাধারণ মানুষ দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছে। এ অবস্থায় অভিভাবকরা ছেলেমেয়ের পড়ালেখার ব্যয় নিয়ে আরো দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
একদিকে সব ধরনের শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। অন্য দিকে শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ভর্তি ও সেশন ফিসহ নানা খাতে প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে অর্থ আদায় করে থাকে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলের স্কুল-কলেজে বিভিন্ন উসিলায় ফি আদায় করার প্রতিযোগিতা চলে; যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভর্তি ফি বাবদ সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা যাবে না, করলে সরকারি এমপিও বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বলাই বাহুল্য, এ হুঁশিয়ারি কেউ মানে না।
বেসরকারি স্কুলে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি ফি নিয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সর্বসাকুল্যে মফস্বল এলাকায় ৫০০ টাকা, উপজেলা এলাকায় এক হাজার টাকা, জেলা সদর এলাকায় দুই হাজার ও ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকার বেশি হবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত স্কুলশিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকার অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে পারবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ও ননএমপিও শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দিতে শিক্ষার্থী ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফিসহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা ও ইংরেজি ভার্সনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নিতে পারবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, উন্নয়ন খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান তিন হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না। একই প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক শ্রেণি থেকে পরবর্তী ক্লাসে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতি বছর সেশন চার্জ নেয়া যাবে। তবে পুনঃভর্তি ফি নেয়া যাবে না। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলে ভর্তির সময়ে শিক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা নিয়ে সংশ্লিষ্ট হিসাব খাতে জমা দিতে হবে।
কোথায় নানা উসিলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অতিরিক্ত অর্থ আদায় কঠোরভাবে বন্ধ করবে শিক্ষা অধিদফতর, সেখানে উল্টো এবার মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক (মাউশি) অধিদফতরই নতুন করে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বাধ্যতামূলক আরো ১০০ টাকা আদায়ের বিজ্ঞপ্তি জারি করলো। বাস্তবতা হলো, অর্থনৈতিক চরম মন্দার এই সময়ে ১০০ টাকা-ই অনেক পরিবারের জন্য অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে।
চলতি বছর থেকে ভর্তি ফির সাথে আদায় করা হবে অতিরিক্ত এই অর্থ। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সার্কুলার জারি করায় অনেকটা বাধ্য করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হবে এ অর্থ। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ টাকা আদায় করে প্রতিষ্ঠানের তহবিলে জমা রাখতে বলা হয়েছে বেসরকারি স্কুলগুলোর প্রধানদের। এর মাধ্যমে শিক্ষকদের কল্যাণ ও অবসর সুবিধার টাকা জোগানোর ভার শিক্ষার্থীদের কাঁধে দেয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে।
অর্থনৈতিক মন্দাকালে এমনিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ফি ছাড়া আরো কয়েকটি খাতে যে হারে টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে তা-ই অনেক শিক্ষার্থী বা তাদের পরিবারের জোগান দেয়া কষ্টকর হয়ে পড়বে। তাই শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ফান্ডের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাপ না দিয়ে; বরং তা প্রত্যাহার করা উচিত। একই সাথে নানা অজুহাতে বিভিন্ন খাতে অর্থ আদায় কঠোরভাবে বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে ছেলেমেয়েদের শিক্ষাব্যয় আরো অসহনীয় হয়ে উঠবে অভিভাবকদের জন্য।