যে কোনো কারণেই জনজীবনে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। ফলে সংকট সৃষ্টি হলে তা মোকাবেলা করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি। প্রসঙ্গত বলা দরকার, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে সারাবিশ্বেই জ্বালানি সরবরাহে বিরাট এক সংকট তৈরি হয়েছে। আর এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, জ্বালানি সরবরাহের ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরে লোডশেডিং চলছে। স্বাভাবিকভাবেই এতে জনভোগান্তি তীব্র আকার ধারণ করেছে, অন্যদিকে আরও উৎকণ্ঠার বিষয় হলো- শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যা সাম্প্রতিককালে দেখা যায়নি বলে খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে।
আমরা বলতে চাই, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে নানা ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এটাও বিবেচনায় নেয়া দরকার, প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে এমনটি উঠে এসেছে যে, সামনে লোডশেডিংয়ের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে সরকারের উচ্চ মহল থেকে আভাসও পাওয়া গেছে। অন্যদিকে এটাও সংশ্লিষ্টদের আমলে নেয়া দরকার, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পরিস্থিতির জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশের পর স্থানভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সময় বেঁধে দেয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা মনে করি, সার্বিক বিষয়গুলো সামনে রেখে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
বলা দরকার, গত কয়েকদিনে লোডশেডিং ঘিরে সংকট বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্বালানি বিশ্লেষকরা পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই সরকারকে জ্বালানি সাশ্রয়ে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছে। যা সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে। এছাড়া প্রয়োজনে রাতের একটা সময় কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পুরোপুরি বন্ধ রাখা ও বাড়িঘরে বিদ্যুতের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বন্ধে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার কথাও আলোচনায় এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক সময় নির্ধারণ করে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
আমরা বলতে চাই, লোডশেডিংয়ে যেমন জনজীবন বিপর্যস্ত হয়, তেমনি উৎপাদন ব্যবস্থাও ব্যাহত হয়-যার সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রসঙ্গ জড়িত। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, শিল্প মালিকরা জানিয়েছেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের দিনের অধিকাংশ সময় কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সময়মতো বিদেশে পণ্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রপ্তানি অর্ডার বাতিলের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অথচ গত রোববার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে (২০২১-২২) ৫ হাজার ২০৮ কোটি ৭ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। কিন্তু বিবেচ্য যে, বিরাট এ সাফল্য অর্জনের পর উদ্যোক্তারা আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও বর্তমান পরিস্থিতি বজায় থাকলে সব সম্ভাবনাই মøান হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় রাখা দরকার, বিশ্লেষকদের মত হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে সারাবিশ্বেই জ্বালানি সরবরাহে বিরাট এক সংকট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়ার ওপর যেসব দেশ জ্বালানি নির্ভর ছিল, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউক্রেনের মিত্রদের নানান নিষেধাজ্ঞার কারণে সেই সংকট আরও প্রকট হয়েছে। আর এমন পরিস্থিতিতে বহু দেশ- সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্বালানি পেতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি আরও অনেক দেশ। তাতে চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও কয়েকগুণ বেড়েছে। জ্বালানির এমন উচ্চমূল্য অনেক দেশের কাছেই বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। আর যে কারণে স্বল্প আয়ের দেশগুলোর পক্ষে এই মুহূর্তে বেশি দামের জ্বালানি কেনা সম্ভব হচ্ছে না। আর জানা যাচ্ছে, সংকটের এই চক্রে বাংলাদেশও ভুক্তভোগী।
সর্বোপরি বলতে চাই, যে সব পরামর্শ সামনে এসেছে সেগুলোকে আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে লোডশেডিংয়ের প্রভাব বিবেচনায় রেখে করণীয় কী কিংবা এই সংকটকে কীভাবে সামাল দেওয়া যায় সেই পথ খুঁজতে হবে। মনে রাখা দরকার, ঢাকায় লোডশেডিং যেমন আছে, তেমনি ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি আরও খারাপ। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।