শুধু রাজনৈতিক মহলের নয়, পুরো জনসাধারণের। অন্তর্র্বর্তী সরকার তাদের ক্ষমতা লাভের ছয় মাসের মধ্যে দৃষ্টিগ্রাহ্য এমন কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেনি, যা নিয়ে জনগণ আশাবাদী হতে পারে। সংস্কার কমিটিগুলো যে সুপারিশমালা প্রণয়ন করেছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু হবে অচিরেই, এ রকম একটি আভাস যদিও পাওয়া গেছে, কিন্তু জনগণ এগুলোর বাইরে বর্তমানে দুটি বিষয় নিয়ে খুবই চিন্তিত বলে মনে হয়। তার একটি হলো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং অন্যটি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না এলে মুদ্রাস্ফীতি কিংবা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি লাগামের মধ্যে আনা কঠিন বলে অনেকেই মনে করেন। এই দলে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাও আছেন।
সংশয়ের বিষয় হলো, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলেই বিপদ কেটে যাবে, এ রকম ভাবা কঠিন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নামে পরিচিত পুলিশ বিভাগ নৈতিকভাবে এতোটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে তাদের ওপর আস্থা রাখাটাও এখন সহজ নয়। বিভিন্ন এলাকায় যেভাবে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করার খবর উঠে আসছে, তাতে দ্বিধাহীনচিত্তে পুলিশ বিভাগ তাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ আছে। ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের, বিশেষ করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের যে কর্মকা- দেখা যাচ্ছে, তাতে মাস্তানতন্ত্র রাজনীতি থেকে অচিরেই নির্মূল হবে, এ রকম আশাবাদ ব্যক্ত করা যাচ্ছে না। তারপরও একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দিকেই মানুষের ভাবনার ঝোঁক, এ কথা বললে অন্যায় হবে না। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে আত্মজিজ্ঞাসার সম্মুখীন হতে হবে। প্রচলিত যে রাজনীতি ক্ষমতাবানকে আইনের ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়ার পথ পরিষ্কার করে, সে রাজনীতিতেই তারা আস্থা রাখবে, নাকি সত্যিই দলের মধ্যে সংস্কার এনে এবং রাষ্ট্র পরিচালনার সময় নৈর্ব্যক্তিক থাকার মাধ্যমে দেশকে পৌঁছে দেবে জনগণের আরাধ্য স্বপ্নের কাছে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। রাজনীতি মানে যে দেশ ও দশের সেবার অঙ্গীকার, সে কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে নিজের আখের গোছানোর যে ঐতিহ্য রাজনীতিকে গ্রাস করেছে, তা থেকে মুক্ত হওয়ার বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে স্বাধীন যে প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের দেশকে মসৃণভাবে পরিচালিত করবে, সেগুলো যেন স্বাধীন থাকতে পারে, সেই প্রতিশ্রুতিও রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের কাছ থেকে চাইতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, নানা ধরনের বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ বা ১৯৭১ প্রসঙ্গে যে বিভ্রান্তিগুলো ছড়ানো হয়েছে, সেখান থেকে যদি জাতিকে উদ্ধার করা না হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, কোনো ধরনের সংস্কার কার্যক্রম এই দেশকে তার আরাধ্য দিশা দেখাতে পারবে না। তাই সংস্কার বা নির্বাচন যে প্রসঙ্গই উঠে আসুক না কেন, নিজেদের ভিত্তিমূলকে প্রতিষ্ঠিত করেই তা এগিয়ে নিতে হবে। এর বিকল্প নেই।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.