রাজনীতির মাঠ ক্রমেই সহিংস ও সংঘাতময় হয়ে উঠছে। গত ২২ আগস্টের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশের সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বের করা মিছিলে পুলিশের বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে বেশ কটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও আক্রমণ চালিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। নির্বাচনকালীন সরকার, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনসহ (ইভিএম) বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এ সংকট নিরসনে দুই দলের মধ্যে আলোচনা বা সংলাপ জরুরি হলেও এর কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না; বরং নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, দুই দলের মধ্যে দূরত্ব ততই বাড়ছে।
এ পরিস্থিতি যে রাজনীতি ও অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত, তা বলাই বাহুল্য। অনেকে মনে করছেন, চলমান সংঘাত-সংঘর্ষ আরও ছড়িয়ে পড়বে এবং এতে জানমালের ক্ষতি হওয়া ছাড়াও দেশের অর্থনীতি নাজুক হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে মনে করি আমরা। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিরোধীদলীয় মিছিল-সমাবেশে যেন বাধা দেয়া না হয়। তার এ কথার প্রতি পুলিশ কিংবা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেন গুরুত্ব দিচ্ছেন না, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। এটা ঠিক, বিরোধীদলীয় মিছিল বা সমাবেশ থেকে যদি ধ্বংসাক অথবা আইনবিরোধী কর্মকা- পরিচালনা করা হয়, তাতে পুলিশ বাধা দিতেই পারে। কিন্তু কোনো শান্তিপূর্ণ মিছিল বা সমাবেশে পুলিশের কিংবা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আক্রমণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এ প্রসঙ্গে আমরা বিবদমান দুপক্ষকেই গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও উন্নত সংস্কৃতির পরিচয় দেয়ার আহ্বান জানাব। আমরা অতীতে দেখেছি, রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা দেশের জন্য কোনো মঙ্গল তো বয়ে আনেইনি; বরং তা দেশের অনেক ক্ষতি করেছে। এ পুরোনো পরীক্ষিত পথে না হেঁটে নতুন উপলব্ধিতে সামনের দিকে এগোতে হবে আমাদের। আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বিরোধী দলের যেসব দাবি রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসার জন্য উভয়পক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে।
শুধু তাই নয়, আলোচনার টেবিলে উভয়পক্ষকে কিছু মাত্রায় ছাড় দেয়ারও মানসিকতা থাকতে হবে। এ মুহূর্তে সবচেয়ে যা জরুরি তা হলো-সমঝোতার রাজনীতি, একে অন্যকে ধারণ করার রাজনীতি। রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে রাখতে হবে, সাধারণ মানুষ কোনো দোষ করেনি। সুতরাং তাদের প্রাত্যহিক জীবন যাতে ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে, তা দেখভাল করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোকে সঠিকভাবে পালন করতে হবে।