যক্ষ্মার ঝুঁকি : সরকারি অর্থায়ন বাড়ানোর বিকল্প নেই

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা খাতের কর্মসূচিও বাধাগ্রস্ত করবে। ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব কর্মসূচিতে কর্মরত অনেক কর্মী ইতিমধ্যে বেকার হয়ে গেছেন কিংবা অনেকে শিগগিরই বেকার হয়ে যাবেন। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধ হওয়ার কারণে যক্ষ্মা শনাক্তের কাজ ঠিকমতো চলছে না। যক্ষ্মা রোগীর ১৭ শতাংশ রয়ে গেছেন অশনাক্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, যে সাতটি দেশে একই সঙ্গে সাধারণ যক্ষ্মা ও ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি, বাংলাদেশ এর অন্যতম। দীর্ঘদিন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চালিয়ে নেয়ার পরও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া উদ্বেগজনক। ২০২৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর যক্ষ্মায় ৩ লাখ ৭৯ হাজার মানুষ আক্রান্ত হন। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর তারা সারাদেশে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬২৪ জনের যক্ষ্মা শনাক্ত করতে পেরেছে। এর অর্থ সন্দেহভাজন ৬৫ হাজার ৩৭৬ জন বা ১৭ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের বাইরে। এসব রোগী চিকিৎসাসেবা না নেয়ায় অন্যরাও সংক্রমিত হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, প্রায় আড়াই দশক ধরে ব্র্যাকসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা এনজিও যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সহায়তা দিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশও (আইসিডিডিআরবি) সরকারি কর্মসূচিতে সহায়তা দেয়। ১৯৯৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যক্ষ্মাকে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করার পর থেকে বাংলাদেশ সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে আসছে। দেশে যেকোনো নাগরিকের জন্য যক্ষ্মা শনাক্তের পরীক্ষা, ওষুধ ও চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেয়া হয়। এ ধরনের রোগীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। চিকিৎসাসেবায় কোনো রকম বিচ্যুতি বা অনিয়ম হলে তাদের রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা কম। অতীতে যক্ষ্মা নিয়ে অনেক রকম কুসংস্কার ছিলো। কেউ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হলে পরিবারের পক্ষ থেকে সেই খবর গোপন রাখা হতো। তারা মনে করতেন, যার হয় যক্ষ্মা, তার নেই রক্ষা। কিন্তু এখন যক্ষ্মাকে অনিরামেয় রোগ ভাবা হয় না। ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা দেয়া হলে রোগীদের সুস্থ করা যায়। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের কারণে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিলো। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া না গেলেও যক্ষ্মা নিরোধ কর্মসূচি বন্ধ হবে না। বক্ষব্যাধিবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক আসিফ মাহমুদ মোস্তফা বলেন, ইউএসএআইডির অর্থায়ন বন্ধ হওয়ায় সরাসরি প্রভাব পড়বে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে সরকারি অবকাঠামো ও জনবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি যক্ষ্মা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা ব্যবস্থাপনায় সরকারি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা বলেছেন। তার কথার ওপর আস্থা রেখেও আমরা বলতে চাই, পুরো কর্মসূচিটি নতুন করে সাজাতে হবে। প্রত্যেক যক্ষ্মা রোগীকে শনাক্ত করা ও চিকিৎসাসেবা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ বা গাফিলতির কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More