মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও মনোযোগী হওয়া উচিত

সম্পাদকীয়

গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। কিন্তু সে তুলনায় বাড়ছে না মানুষের আয়। ফলে তাদের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এতে দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে থাকা মানুষও দরিদ্র হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশে, যা মে মাসে ছিলো ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর আগে কখনো এত বেশি মূল্যস্ফীতি হয়নি।

বস্তুত নিম্নআয়ের মানুষ যেসব পণ্য ভোগ করে সেসব পণ্যের মূল্যস্ফীতি বিবিএসের তথ্যের চেয়েও বেশি। এছাড়া শহরের তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় মূল্যস্ফীতি বেশি। এ অবস্থায় নিত্যপণ্য ও অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির প্রভাব নিম্নআয়ের মানুষকে চরম দুর্দশায় ফেলছে।

এমনিতেই করোনার কশাঘাতে চাকরি হারা, বেকার ও আয়-রোজগার কমে যাওয়া জনগোষ্ঠী দৈনন্দিন খরচের টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে, তার ওপর মূল্যস্ফীতির চাপে বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছে অনেক পরিবার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ না হলে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়বে; অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে পড়বে এর নেতিবাচক প্রভাব, যা থেকে বাংলাদেশও মুক্ত থাকবে না। লক্ষ করা যাচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও বিভিন্ন দেশে কাক্সিক্ষত মাত্রায় পণ্য উৎপাদন হচ্ছে না। এতে আগামীতে পণ্যের জোগান মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। কাজেই অচিরেই আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতা কমবে, এ আশা ক্ষীণ। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

এখন পর্যন্ত কৃষিই আমাদের অর্থনীতির প্রধান রক্ষাকবচ। তাই কৃষি উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি এ খাতকে বেগবান করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে ভোগ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। কৃষির ওপর নির্ভরশীল মানুষের আয় বাড়লে তা সামষ্টিক অর্থনীতিকেও গতিশীল করবে। এখন আর আগের নিয়মে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতির অনেক কিছুই বদলে গেছে। দেশের অধিকাংশ কৃষক এ বিষয়ে অজ্ঞ। এসব বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া না হলে গতানুগতিক পরিকল্পনায় কৃষি খাতকে বেগবান করা সম্ভব হবে না।

বস্তুত প্রান্তিক কৃষকসহ ক্ষুদ্র আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না বাড়লে মূল্যস্ফীতি রোধের কার্যক্রমে সুফল মিলবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। সাম্প্রতিক সময়ে ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সীমিত ও স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় পড়েছে এর নেতিবাচক প্রভাব। এ পরিস্থিতিতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আকার ও গভীরতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে।

দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে আমদানিনির্ভরতা কমানোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। ডলারের দামবৃদ্ধির কারণেও বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে। কাজেই উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর পদক্ষেপও নিতে হবে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে অর্থনীতির সব খাতে তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন এবং এ তদারকি নিশ্চিত করতে হবে কঠোরভাবে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যস্ফীতির প্রভাবের পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের দুর্নীতির কারণেও দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। কাজেই ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক জীবনে যাতে বিপর্যয় নেমে না আসে, সেজন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও মনোযোগী হওয়া উচিত সরকারের।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More