বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। অথচ অতীতে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার জন্য যেসব চুক্তি করেছে, সেসব চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কর্মী নেয়নি। প্রতিবারই মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ কিছু অভিযোগ উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো, পদ্ধতিগত গলদের কারণে কর্মীদের কাছ থেকে বেশি অর্থ আদায়। এতে সাধারণ মানুষের ব্যয়ও অনেক বেড়েছে। এ কাজে বাংলাদেশি সিন্ডিকেটের সঙ্গে মালয়েশিয়ারও অনেকে জড়িত ছিলেন। কাজেই মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কর্মী প্রেরণে সিন্ডিকেটের তৎপরতা বন্ধে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের শেষদিকে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর কিছুদিন পরই মাত্র ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী প্রেরণের বিষয়ে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়। এভাবে নির্দিষ্টসংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ করা হলে সাধারণ মানুষের ব্যয় অনেক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। এ ধরনের শর্তের পেছনে সিন্ডিকেটের প্রভাবের বিষয়টি স্পষ্ট। কাজেই এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের খুঁজে বের করার পাশাপাশি যারা এদের নেপথ্যে থেকে শক্তি জোগাচ্ছে, তাদেরও চিহ্নিত করা দরকার। তা না হলে বিদেশে যেতে আগ্রহী কর্মীরা বারবার প্রতারণার শিকার হবে। এ সিন্ডিকেটের কারণে বিদেশে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি আগ্রহীরা যাতে স্বল্প ব্যয়ে বিদেশে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করাও জরুরি।
রেমিট্যান্স দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। যেসব কর্মকা-ের ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেসবের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই সিন্ডিকেট সক্রিয়। তবে জনশক্তি রপ্তানি ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের কারণে ক্ষতির মাত্রা অনেক বেশি এবং এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। কাজেই বিদেশে যাতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ না হয় সেজন্য এ খাতের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। যে কোনো দেশে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে হবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে আমাদের প্রবাসী শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আরও নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার। দীর্ঘমেয়াদে প্রবাসী বাংলাদেশিদের শ্রমনির্ভর কাজের পরিবর্তে মেধানির্ভর কাজে অংশগ্রহণের বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে আমাদের এ বিষয়ে সব আয়োজনই প-শ্রমে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।