মহান স্বাধীনতা দিবস : আত্মত্যাগের মহিমান্বিত অধ্যায়

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪তম বছরটি এসেছে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আলোকিত ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনের ব্যতিক্রমী বার্তা নিয়ে। ইতঃপূর্বে পালিত হয়েছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। স্বাধীনতার সূর্য উঠবেই, উঠেছেও। বিজয় নিশানও উড়ছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, ঘরে ঘরে, আকাশে-বাতাসে সর্বত্র। কেননা, স্বাধীনতা অমলিন, চিরকালের। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস। একটি সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এইদিন বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা হয়। এর জন্য এ দেশের মানুষকে দীর্ঘ ৯ মাস পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করতে হয়েছে। লাখো শহিদের রক্তে রঞ্জিত জাতীয় দিবস। বিশ্বের বুকে লাল সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনতা পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা করে। আর এই দিনেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল- তাই ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার লক্ষে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় বিজয়ের লাল সূর্য। আমরা স্বাধীন হলাম। পেলাম স্বাধীন সার্বভৌম দেশ বাংলাদেশ। অর্থাৎ ১৯৭১-এ জন্ম নেয়া বাংলাদেশটির বয়স এখন ৫৪ বছর। স্বাধীনতা মানে শৃঙ্খল ও শোষণের করাল গ্রাস থেকে নিজের মুক্তি, আর আত্মোন্নয়নের পথে স্বাধীনভাবে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ লাভ। কিন্তু এ সুযােগ আমরা কতখানি সদ্ব্যবহার করেছি, কতখানি আমাদের শুভ অর্জন, তা মূল্যায়ন করে দেখার জন্য প্রতিবছর আমরা পালন করি স্বাধীনতা দিবস। আমরা খতিয়ে দেখি আমাদের ব্যর্থতার নেতিবাচক দিকগুলো। আর প্রত্যাশা রাখি সুন্দর আগামীতে। যেনো স্বাধীনতার আরেকটি বছর আসার আগে নিজেরা আরেকটু উন্নত হতে পারি। আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে পারি দেশকে সেই প্রত্যাশা সকলের মাঝেই থাকে। আমরা চেয়েছিলাম বৈষম্যহীন একটি স্বাধীন দেশ, একটি প্রগতিশীল সমাজব্যবস্থা। আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল দুঃখী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন। চেয়েছিলাম শিক্ষা-সংস্কৃতিতে, গণতান্ত্রিক চেতনায় আমাদের স্বাধীন ও স্বনির্ভর একটি দেশ গড়ে তুলতে। স্বাধীনতা দিবস অর্থাৎ ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা অকস্মাৎ সৃষ্ট কোনো আবেগময় ঘোষণা নয়। এর পেছনে রয়েছে বাঙালির আত্মত্যাগ, আত্মবিসর্জন ও আন্দোলন-সংগ্রামের সুদীর্ঘ রক্তাক্ত পথ। এই অমসৃণ পথ পাড়ি দিয়ে এই দিনে বাঙালি জাতি আরেক রক্তাক্ত পথে চলতে শুরু করল। অতঃপর দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ, সংগ্রাম, মৃত্যু, লাঞ্ছনা ও চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা লাভ করি বিজয়। হাতে পাই সবুজ-লালের মিশ্রণে তৈরি একটি পতাকা, একটি গর্বিত ভূখ-। ‘৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ‘৫৪-এর সাধারণ নির্বাচন, ‘৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ‘৬৬-এর ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন, ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান- এরকম অগণিত আন্দোলন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে বাঙালি জাতি যে প্রত্যাশাকে লালন করে অগ্রসর হয়েছিল, তারপর একাত্তরের রক্তাক্ত মার্চের অসহযোগ আন্দোলন পেরিয়ে ছাব্বিশে মার্চে সেই প্রত্যাশা, সেই স্বপ্ন পরিণত হয়েছিল মহান স্বাধীনতা লাভের আকাক্সক্ষায়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির বিজয়ে শঙ্কিত পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তরে যে তালবাহানা শুরু করেছিল তাতেই বাঙালি বুঝতে সক্ষম হয় যে, এরা বাঙালিকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তখনই ছিড়ে যায় দুর্বল ঐক্যের রশিটা। ২৬ মার্চ আসে সেই সুযোগ, স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা এবং বাঙালিদের সশস্ত্র প্রতিরোধ। তাই এদিন আমাদের জাতীয় জীবনের এক মহালগ্ন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More