ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে

মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালে মরণপণ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। এ কৃতিত্বের জন্য রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে তারা যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা পাওয়ার অধিকারী। দুঃখজনক হলো, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা অনেক দিন ধরে একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের তিন মেয়াদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া সনদ বাণিজ্য’ করার অভিযোগ উঠেছে। ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ভুয়া সনদ দিয়েছেন তিনি। শুধু ভুয়া সনদ বিক্রি করেই ক্ষান্ত হননি, মুক্তিযোদ্ধার তালিকা ‘ টেম্পারিং’ করে সনদ নিয়েছেন আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক নিজেও। সাবেক এই মন্ত্রী কোথায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং যুদ্ধ করেছেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। এ নিয়ে তিনি নিজেও খুব বেশি বর্ণনা করেননি। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক সিনিয়র মন্ত্রী হওয়ায় এতোদিন আ.ক.ম. মোজাম্মেল হকের বিষয়ে কেউ মুখ খোলেননি। তবে বিতর্কটি শুরু হয় ১৯৯৬ সালে। তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধা গেজেট প্রকাশ করে। সেখানে আ.ক.ম মোজাম্মেলের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে বিভিন্ন মহলে। ‘ভুয়া সনদ বাণিজ্য’ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি নিয়ে লজ্জাজনক অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। দেশবাসী মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে চায়। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরির পাশাপাশি দ্রুত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করা হবে, দেশবাসী এটাই দেখতে চায়। আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক প্রায় ২৫ হাজার ভুয়া সনদ বিক্রি করে পাহাড়সম অর্থ নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন-এমন অভিযোগ ’৭১-এর সম্মুখসারির একাধিক যোদ্ধার। ইতোমধ্যে ১১ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করতে পেরেছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। বাকি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্তে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। বস্তুত এই অপকর্ম আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক একাই করেননি। ধারণা করা যায়, এ কাজে তাকে অনেকেই সহায়তা করেছেন। এ কাজে তাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা সহায়তা করেছেন তাদের সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে, দেশবাসী এটা দেখতে চায়। জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারের ঊর্ধ্বতন যেসব কর্মকর্তা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা হয়েছে। ওইসব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভুয়া সনদ দিয়ে অতিরিক্ত দুবছর চাকরির সুযোগ পেয়েছেন। যেসব কর্মকর্তা এমন কাজ করেছেন তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে সরকারি অর্থ ফেরত আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। সব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার শাস্তি হওয়া উচিত। কারণ তারা রাষ্ট্রের কাছ থেকে অন্যায় ও অবৈধভাবে বিভিন্ন সুবিধা গ্রহণ করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বঞ্চিত করেছেন এবং রাষ্ট্রের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছেন। সব মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সহযোগীরা যথাযথ রাষ্ট্রীয় সম্মান ও মর্যাদা পাবেন, এটাই প্রত্যাশা। অনেক মুক্তিযোদ্ধাই আছেন বা ছিলেন, যারা রাষ্ট্রের আনুকূল্য নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। তাদেরও যথাযথ রাষ্ট্রীয় সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করা দরকার।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More