ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথে এগোতে হবে

সম্পাদকীয়

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গত রোববার এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেছিলো। সেখানে বড় বড় অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞের আলোচনায় দেশের অর্থনৈতিক সংকটের কারণগুলো এবং তা থেকে উত্তরণে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এ ব্রিফিংয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপিত হয়েছে। যেমন-ব্যাংকিং খাত ও আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা, যা আগে থেকে চলে আসছে। দেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে অনেক আগে থেকেই। প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি চলে আসছে-এটিও পুরোনো সমস্যা। বর্তমানে এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৈশ্বিক পরিস্থিতি। সবকিছু মিলে দেখা দিয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট। এর ফলস্বরূপ সৃষ্টি হয়েছে জ্বালানি সংকট। এ সূত্র ধরেই এসেছে বিদ্যুৎ সংকট। অর্থাৎ একটির সঙ্গে আরেকটি সম্পর্কযুক্ত।

এ প্রেক্ষাপটে সিপিডির ব্রিফিংয়ে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, স্বল্পমেয়াদিভাবে এ সংকট মোকাবেলার চিন্তা করলে হবে না। এজন্য সংকটের নেপথ্যে যেতে হবে। তার মতে, দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা লৌহ ত্রিভুজে আটকে গেছে। এ ত্রিভুজের প্রথম অংশটি হলো একমাত্রিক উন্নয়ন দর্শন। দ্বিতীয়ত, স্বার্থের দ্বন্দ্বভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা। প্রতিটি ক্ষেত্রে আইনগতভাবে অনিয়ম তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাত অন্যতম। অর্থাৎ যেখানে যাদের স্বার্থ আছে, সেখানে তাদের যুক্ত করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেছেন, বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে সাময়িক সময়ের জন্য কুইক রেন্টাল তৈরি করা হয়েছিলো। সেটি কেন দীর্ঘমেয়াদি করা হলো, তা ভাবা দরকার। অর্থনৈতিক দিক থেকে এর কোনো ব্যাখ্যা নেই। তৃতীয়ত, তিনি ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কথা বলেছেন। এরপর বলেছেন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা। এসব খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি দীর্ঘদিনের। তাই তিনি বলেছেন, বড় কোনো ধাক্কা ছাড়া এই ত্রিভুজ ভাঙা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক উপলব্ধি, সদিচ্ছা ও সিদ্ধান্ত জরুরি।

আমরা মনে করি, যে কোনো সংকট মোকাবেলায়ই রাজনৈতিক উপলব্ধি, সরকারের সদিচ্ছা এবং সঠিক সিদ্ধান্তের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। কেননা সমস্যা কখনো বলেকয়ে আসে না। যখন আসে, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও সতর্কতা না থাকলে তা বড় আকারের সংকট হয়ে আসে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা রোধে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যদি কঠোর হতো এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিত, তাহলে এ খাতে জালিয়াতি ও অর্থ পাচার বন্ধ হতো। সেক্ষেত্রে আজ হয়তো রিজার্ভে ঘাটতি হতো না। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কার্যকর জবাবদিহিতার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দেশে গ্যাস উত্তোলনে নজর দেয়া হলে আজ পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুতের লোডশেডিং দিতে হতো না।

সিপিডির ব্রিফিংয়ে দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর দুর্বলতার বিষয়টি উঠে এসেছে। বিদ্যমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় মানুষের জীবনমানের দিকটিও তুলে ধরা হয়েছে। ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দারিদ্র্যের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার কথা বলেছেন। বলেছেন, বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে, এটি কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বস্তুত অর্থনীতি যদি সঠিক পথে পরিচালিত হয়, দুর্নীতি-অনিয়মের লাগাম টেনে ধরা হয়, তাহলে এসব সমস্যা অনেকাংশে দূর হতে পারে। আমরা আশা করবো, সরকারের কাছে বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথে সামনে এগোতে হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More