জাতিসংঘের বিশ্বখাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল বিশ্বের অন্যতম সেরা জাত। বাংলাদেশের স্থানীয় জাতের এ ছাগল অধিক মাংস উৎপাদন ও সুস্বাদের জন্য বিখ্যাত। এ জাতের ছাগল বছরে দুই দফায় ৮ থেকে ১২টি বাচ্চা দেয় বলে এটি ‘গরিবের গাভি’ হিসেবে খ্যাত। বিশ্ববাজারে এর চামড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালন করে ভাগ্যবদল হয়েছে অনেক খামারির। সরকারিভাবে ২০১৭ সালে চুয়াডাঙ্গার ‘ব্র্যান্ডিং পণ্য’ হিসেবে এটি নির্বাচিত হয়। এ জাতের ছাগল সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও স¤প্রসারণের লক্ষ্যে সম্প্রতি সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল উন্নয়ন মেলা’। মেলায় খামারিরা এ জাতের ছাগল পালন করে দিনবদলের যে গল্প শুনিয়েছেন, তা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ী। খামারি সিরাজুল ইসলাম একসময় ছিলেন ভ‚মিহীন মজুর। ৩০ বছর আগে প্রথমে দুটি ছাগল পালনের মাধ্যমে তার যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে তার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে ৬০টি ছাগল রয়েছে। ছাগল পালন করেই তিনি ভিটেবাড়ি ও চাষের জমি কিনেছেন। সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। আরেক খামারি নাসিমা খাতুন। ১০ বছর আগে তার বিয়ে হয়েছিলো। দুই বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হলে বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন, শুরু করেন ছাগল পালন। বর্তমানে তার খামারে ৪০টি ছাগল রয়েছে। শুধু সিরাজুল ইসলাম কিংবা নাসিমা খাতুন নন, চুয়াডাঙ্গা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এ ধরনের খামার রয়েছে ৬৫৯টি। এছাড়া জেলার তিন ভাগের এক ভাগ পরিবার কোনো না কোনোভাবে ছাগল পালনের সঙ্গে যুক্ত। বছরে সেখানে প্রায় দুই লাখ ছাগল উৎপাদন হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
বিশ্বে ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ চতুর্থ, ছাগলের মাংস উৎপাদনে পঞ্চম। ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই। তবে চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলায় এ জাতের ছাগল ব্যাপকভাবে পালন হচ্ছে। বাকি জেলাগুলোতে ছাগলের উৎপাদন এখনো কম। চুয়াডাঙ্গার খামারিদের দিনবদলের গল্প থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে দেশের অন্যান্য জেলায় এ জাতের ছাগল উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে। এতে একদিকে যেমন আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে, অন্যদিকে প্রাণিজ আমিষেরও জোগান বাড়বে। চুয়াডাঙ্গার খামারিদের দৃষ্টান্ত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়–ক।