বেঁচে যাওয়াদের বাঁচার লড়াই

সম্পাদকীয়

সম্প্রতি স্মরণকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা ৩৩ হাজার ছাড়িয়েছে। দেশ দুটিতে ঘটনার ছয়দিন পরও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকাল রোববার  পাওয়া সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, শুধু তুরস্কেই প্রাণ হারিয়েছে ২৯ হাজার ৬০৫ জন। অন্যদিকে সিরিয়ায় মারা গেছে, চার হাজার ৫০০ জন। এ ভূমিকম্পে নিহতদের প্রতি আমরা জানাই গভীর শোক এবং আহতদের প্রতি সহমর্মিতা। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ একদিকে যেমন বিপর্যয় ডেকে আনে, তেমনি তা সহমর্মিতা ও সহযোগিতার মানবিক বার্তা প্রদানের সুযোগও এনে দেয়। তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের সপ্তম দিনেও উদ্ধারকাজের অনেক বাকি। এখনো ধসে পড়া অনেক ভবনে শুরু হয়নি উদ্ধার তৎপরতা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, সময় যতো যাবে, মৃত্যুর সংখ্যা ততোই বাড়বে। শেষ অবধি এ সংখ্যা কোথায় থামবে তার কোনো ধারণাও তাদের নেই। নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে, এমন আভাস দিয়েছেন জাতিসংঘের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস। এ মধ্যে তীব্র ঠা-া, বৃষ্টি, যোগাযোগে বিপর্যয়সহ নানা সমস্যায় উদ্ধার ব্যাহত হওয়ায় ধ্বংসস্তুপে আটকে পড়াদের জীবিত উদ্ধারের আশা ফিকে হয়ে আসছে। আশ্রয়, খাবার, পানি, জ্বালানি ও বিদ্যুতের অভাবে উপদ্রুত এলাকাগুলোর বেঁচে থাকা মানুষেরা রয়েছে প্রাণ সংশয়ে। ফলে বিশ^বাসীর দায় এখন মানবিক সহায়তার হাত বাড়ানোর। ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজ শুরু করেছে বাংলাদেশের সম্মিলিত উদ্ধারকারী দল। দীর্ঘদিন ধরে দুর্যোগ, দুর্ঘটনার বিপর্যয়ে মোকাবিলা করে পরিস্থিতিতে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালাতে এক ধরনের সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এদিকে ভূমিকম্প-পরবর্তী সাহায্য হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ত্রাণ ও চিকিৎসাসামগ্রী সিরিয়ায় পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। বন্ধুরাষ্ট্রের বিপদে ত্বরিত সাড়া দেয়ার পাশাপাশি সহায়তায় এগিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে শোকও পালন করছে। তবে ভূমিকম্পের ১৪৭ ঘণ্টা পরও রোববার কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো কোথাও কোথাও প্রাণের স্পন্দন পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা। ঠান্ডায় জমে যাওয়া আবহাওয়ার মধ্যে খোলা আকাশের নিচে কিংবা গাড়ির ভেতরে তৃতীয় রাত পার করেছে তুরস্ক এবং সিরিয়ার বহু মানুষ। ভূমিকম্পে তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে কিংবা হেলে পড়েছে। সেখানে আর ফিরে যাওয়ার সাহস নেই কারও। গৃহহীন হওয়া লাখো মানুষ সাহায্যের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধারের আশাও ক্ষীণ হয়ে আসছে। পাঁচ দিন ধরে উদ্ধারকর্মীরা যেমন দুর্গতদের বাঁচানোর লড়াই করে যাচ্ছেন, তেমনি বেঁচে থাকার লড়াই করতে হচ্ছে বেঁচে যাওয়াদেরও। খবরে বলা হয়েছে, তুরস্কে উৎফুল্ল হওয়ার মতো উদ্ধারের কিছু ঘটনা ঘটলেও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি ক্রমেই আশাহীন হয়ে উঠছে। সিরিয়ায় বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধের কারণে আগে থেকেই অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছিলো। এর মধ্যে ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা তুরস্ক ও সিরিয়ায় ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা শুরু করলেও তা বিপর্যয়ের তুলনায় অপ্রতুল।

ফলে, অন্যান্য দেশ, জাতিসংঘ, রেডক্রসসহ সবাইকে আরও তৎপর হতে হবে। দুর্গত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য বিশ্বের সব দেশ, মানবিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই। ভূমিকম্প মোকাবিলায় মানুষের কিছু করণীয় না থাকলেও ভূমিকম্প সহনশীল ভবন নির্মাণ করতে পারলে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি পে¬ট থাকার কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশে সর্বশেষ ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে মধুপুর ফল্টে বড় ভূমিকম্প হয়েছিলো। ১৮৮৫ সালে ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা শহরে অনেক বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে ইমারত নীতিমালা না মেনে। ফলে সামান্য ভূমিকম্প হলেও বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা আছে। বিবিসির সংবাদ বিশ্লেষণে বলা হয়েছে তুরস্কে নীতিমালা না মেনে সুউচ্চ ভবন তৈরি করায় এবং ভবন তৈরির আইন না মেনে তৈরি বাড়ির অনুমতি প্রদানের ঘটনা সাম্প্রতিক এ ভূমিকম্পে এত বেশিসংখ্যক ভবন ধসের অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় এর চেয়ে কম শক্তিশালী কোনো ভূমিকম্প হলেও পরিস্থিতি কী হবে, অনুমান করা কঠিন নয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More