করোনার প্রভাবে এমনিতে এখনো অনেক মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সঙ্কটে আছে। এর ওপর বছরজুড়ে দফায় দফায় নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের ওই কষ্ট অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে আবার বাড়ছে বিদ্যুৎ ও পানির দাম। এ দুটি পরিষেবার মূল্য বৃদ্ধি পেলে নাগরিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
মাস দুই আগে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম একবারে ৫০ শতাংশের ওপরে বাড়িয়ে সমালোচনার মুখে ৫ শতাংশ কমানো হয়। জ্বালানির দাম বাড়ার পর সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এর রেশ কাটতে না কাটতে এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। পানির দাম বাড়ানোর ঘোষণাও দেয়া হতে পারে যেকোনো সময়। ইতোমধ্যে খুলনা ওয়াসা পানির দাম প্রতি ইউনিটে প্রায় ৩০ শতাংশ বাড়িয়েছে।
ঢাকা ওয়াসা গত দুই বছরে দু’বার আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পানির দাম বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে ২০০৯ সাল থেকে ১৪ বছরে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে ১৫ বার। এদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। বেড়ে গেছে ডলারের দাম। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়লে পণ্যমূল্য নাগালের বাইরে চলে যাবে। এতে জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছুবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের বরাতে (বিইআরসি) বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে পিডিবির বিদ্যুতের দাম ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়েছে। গত ১৮ মে বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে গড়ে প্রায় ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। আজ বৃহস্পতিবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিতে পারে বিইআরসি। এ ক্ষেত্রে প্রথমে শুধু পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়বে বলে জানা গেছে। বিইআরসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কমিশন ১৫-২৫ শতাংশের মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব চূড়ান্ত করে রেখেছে। বিদ্যুৎ বিভাগে তা জমাও দেয়া হয়েছে। সরকার চাইলে এটি কিছুটা বাড়াতে বা কমাতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকার কতটা ভর্তুকি দেবে তার ওপর নির্ভর করবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর হার।
আর পানির দাম বাড়ানোর অপেক্ষায় ঢাকা ওয়াসা। পানির বড় অঙ্কের দাম বাড়ানোর জন্য বছরে ৫ শতাংশ করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখে সংস্থাটি। এখন একবারে ২৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর আয়োজন চলছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদনে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯ টাকা এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য ৪২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা করার কথা বলেছে। সরকার সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে তারা পানির খাতে আর ভর্তুকি দিতে চায় না। যে কারণে পানির দাম বাড়াতে তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছে ওয়াসা, যার দায়ভার বহন করতে হবে নগরবাসীকে। সম্প্রতি ওয়াটার এইডের মাধ্যমে রাজধানীতে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। এতে ধনী-গরিব এলাকা ভাগ করে কোথাও বেশি আবার কোথাও কম দাম নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু পানির দাম নয়, সাথে স্যুয়ারেজ লাইনের জন্যও সমপরিমাণ বিল পরিশোধ করতে হবে গ্রাহকদের। ফলে বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে জর্জরিত ঢাকাবাসীকে আরো বিপাকে পড়তে হবে।
আমরা মনে করি, বিদ্যুৎ এবং পানির মতো পরিষেবার দাম বাড়ানোর আগে নাগরিক জীবনে এর প্রভাব আমলে নেয়া দরকার। কারণ, সাধারণ মানুষকে চাপে রেখে দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ আশা করা যায় না। তাই সরকারকে বিদ্যুৎ-পানির দাম বাড়ানোর আগে কয়েকবার ভাবতে হবে।